মসজিদ নিয়ে গুজবের মাঝেই ত্রিপুরায় ভাঙল মন্দির, জখম এক
কৈলাশহর: কয়েক দিন ধরেই গুজব ছড়িয়েছে যে ত্রিপুরা জুড়ে মসজিদের উপরে হামলা চালানো হয়েছে। পুলিশ তদন্ত করে জানিয়ে দেয় যে সব খবর ভুয়ো। সেই নিয়ে বিতর্কের মাঝেই ঘটে গেল বড় অঘটন। হামলা চালানো হল কালী মন্দিরে। সেই সঙ্গে উগ্রবাদীদের হামলায় জখম হলেন এক ব্যক্তি।
শুক্রবার বিকেলের দিকে ঘটনাটি ঘটেছে ত্রিপুরার কৈলাশহর এলাকায়। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এদিন বিকেল চারটের পরে আচমকা মন্দিরের উপরে হামলা চালায় একদল মানুষ। যাদের সকলেই মুসলিম সম্প্রদায়ের। টিনের তৈরি মন্দিরে রাখা কালী ঠাকুরের প্রতিমার উপরে আঘাত করা হয়। ভেঙে দেওয়া হয় প্রতিমা। সেই সঙ্গে ভাঙচুর চালানো হয় মন্দিরে।
হামলাকারীদের সামনে রুখে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছিলেন স্থানীয় যুবক শিবাজী সেনগুপ্ত। তাঁর উপরেও চড়াও হয় হামলাকারীরা। ছুড়ি দিয়ে আক্রমণ করা হয় তাঁকে। পেটের ডান দিকে ছুড়ি ঢুকিয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয়। গুরুতর জখম অবস্থায় তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। শেষ পাওয়া খবর অনুসারে শিবাজীবাবুর অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে।

খুব স্বাভাবিকভাবেই এই ঘটনা ঘিরে এলাকায় ছড়িয়েছে তীব্র চাঞ্চল্য। যার জেরে কড়া ব্যবস্থা নিতে হয়েছে প্রশাসনকে। জারি করা হয়েছে ১৪৪ ধারা। শুক্রবার বিকেল থেকেই যা কার্যকর হয়ে গিয়েছে। এই আইনের অধীনে পাঁচ জনের বেশি জমায়েত সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ হয়ে গিয়েছে কৈলাশহরে। সেই সঙ্গে অস্ত্র বা হামলা চালানো যায় এমন কোনও সামগ্রী নিয়ে বাড়ির বাইরে যাওয়ার ক্ষেত্রে আরোপ করা হয়েছে নিষেধাজ্ঞা। রবিবার বিকেল পর্যন্ত এই বিধিনিষেধ কার্যকর থাকছে।

দুর্গাপুজোর সময়ে বাংলাদেশ জুড়ে বিভিন্ন জায়গায় মণ্ডপে হামলা চালানো হয়। অনেক হিন্দুদের উপরেও হামলা চলে। একাধিক মানুষের প্রাণ যায়। যার বড় প্রভাব পরে ভারতের মাটিতে। ত্রিপুরায় একাধিক মসজিদে হামলার ঘটনা ঘটে। প্রশাসন কড়া হাতে তা মোকাবিলা করে। কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্রমাগত প্রচার করা হয় যে ত্রিপুরায় শতাধিক মসজিদে হামলা এবং আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। যার জেরে ক্ষোভ জন্মায় মুসলিম সমাজে। সেই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ হচ্ছে কৈলাশহরের মন্দিরে হামলার ঘটনা।
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে বারবার আবেদন করা হয়েছিল। সেই সঙ্গে শুক্রবার জুম্মার নমাজের সময়ে ত্রিপুরার প্রায় ১১০০ মসজিদে অসহিষ্ণুতার পাঠ দেওয়া হয়। সেই সবই যে বিফলে গিয়েছে তা বুঝিয়ে দিল এদিন বিকেলের ঘটনা।