৭৪ বছর পূর্বের স্মৃতি কিছুটা হলেও ফিরে এলো বালুরঘাটে। তৎকালীন পশ্চিম দিনাজপুর জেলা বলে পরিচিত ভূখন্ডটি (যা পরে উত্তর দিনাজপুর ও দক্ষিণ দিনাজপুর, দুটি জেলায় বিভক্ত হয়) ১৯৪৭ সালের ১৮ ই আগস্ট ভারতবর্ষের অন্তর্ভুক্ত হয়। তার আগে তিনদিন এই ভূখণ্ডে পাকিস্তানি পতাকা উড়েছে। ১৮ ই আগস্ট বিকেল আনুমানিক পাঁচ ঘটিকায় অগণিত মানুষের বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসের মধ্য দিয়ে বালুরঘাট হাইস্কুলের মাঠে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেছিলেন প্রখ্যাত বিপ্লবী সরোজ রঞ্জন চ্যাটার্জী (তৎকালীন সময়ে যার মাথার দাম ব্রিটিশ সরকার ধার্য করেছিলো দশ হাজার টাকা। যিনি টানা পাঁচ বছর আত্মগোপন করার পর ওইদিন বালুরঘাট হাইস্কুলের মাঠের সভায় প্রকাশ্যে এসেছিলেন)। হিন্দু সংহতির উদ্যোগে সেই বালুরঘাট হাইস্কুল মাঠে, বিকেল পাঁচটায় মহিলাদের শঙ্খধ্বনি এবং ব্যান্ডে “জনগণমন” সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে ভারতবর্ষের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করলেন সেই সরোজ রঞ্জন চ্যাটার্জীর নাতি বালুরঘাট জেলা আদালতের প্রখ্যাত আইনজীবি সম্মানীয় সুশোভন চ্যাটার্জী।
পতাকা উত্তোলনের পর ব্যান্ডে দেশাত্মবোধক সঙ্গীত এবং ভারতমাতার জয়ধ্বনি সহ শোভাযাত্রা করে আত্রেয়ী লজ এ প্রবেশ। সেখানকার মিটিং হলে এই বিষয়ে নাগরিক সভা। প্রদীপ প্রজ্জ্বলন ও ভারতমাতার প্রতিকৃতিতে মাল্যার্পণের পর সভা শুরু হয়। সেই সভায় বক্তব্য রাখেন মাননীয় সুশোভন চ্যাটার্জী এবং বালুরঘাটের বিশিষ্ট নাগরিক মাননীয় কল্যাণ চ্যাটার্জী (যার মাতৃদেবী বীণা চ্যাটার্জী বেনারস থাকাকালীন বিপ্লবীদের একটি গোপন চিঠি একটি নির্দিষ্ট ঠিকানায় নিয়ে যাবার সময় ব্রিটিশ পুলিশের হাতে গ্ৰেপ্তার হন। তখন তিনি সন্তানসম্ভবা ছিলেন। কয়েকমাস পর জেলে তিনি পুত্রসন্তান প্রসব করেন। সেই পুত্র সন্তানই আজকের ৮১ বছরের এই কল্যাণ চ্যাটার্জী)। এই দুই বিশিষ্ট ব্যক্তিকে সভায় হিন্দু সংহতির পক্ষ থেকে সম্মানিত করা হয়। তাদের বক্তব্যে তারা স্বাধীনতা প্রাপ্তিতে বালুরঘাট ও দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার বিপ্লবীদের অবদান, ১৫,১৬,১৭ আগস্টের চরম অনিশ্চয়তা ও ১৮ ই আগস্টে ভারতভুক্তির বিষয়টি প্রাঞ্জল ভাষায় ব্যাখ্যা করেন। হিন্দু সংহতির সাধারণ সম্পাদক রজত রায় তার বক্তব্যে হিন্দু সংহতির এই কার্যক্রমে উপস্থিত থাকার জন্যে এবং সর্বাত্মক সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবার জন্য এই দুই বিশিষ্ট ব্যক্তিকে এবং সেই সঙ্গে উপস্থিত সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। রজত রায় তার বক্তব্যে ১৯৪৬ এর ১৬ আগস্ট মুসলিম লীগের গ্ৰেট ক্যালকাটা কিলিংস থেকে শুরু করে গোপাল মুখার্জী, বিজয় সিং নাহারদের নেতৃত্বে কলকাতার হিন্দু প্রতিরোধ ও প্রতিশোধের বিষয়টি এবং তৎপরবর্তী পশ্চিমবঙ্গ নামক ভূখন্ডকে পাকিস্তানে যাবার হাত থেকে রক্ষা করার ক্ষেত্রে ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী এবং অন্যান্য হিন্দু বাঙ্গালী মনীষিদের অবদানের বিষয়টি উল্লেখ করেন এবং ১৮ ই আগস্ট যে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার জন্যে অন্যতম প্রধান স্মরণীয় দিন এবং সেই দিনটির চর্চা যে এই জেলার বাড়ীতে বাড়ীতে হওয়া উচিত সেই বিষয়টির উপর বিশেষ জোর দেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন বালুরঘাট জেলা আদালতের বিশিষ্ট আইনজীবি মাননীয় প্রদীপ সরকার। সমবেত “জনগণমন” সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে নাগরিক সভা সমাপ্ত হয়।