‘পশ্চিমবঙ্গের জন্য’ ফেসবুক প্রোফাইল থেকে সংগৃহীত
বিদ্যাসাগর মহাশয় কমিউনিষ্টদের অস্ত্র বিশেষ। তারা তাঁকে পছন্দ করে তার অন্যতম কারন ঈশ্বর সম্পর্কে বিদ্যাসাগর মহাশয়ের নিস্পৃহতা। এটাকে তারা নাস্তিক্য ভাবে এবং সেই মতো প্রচার করে। এ হেন বিদ্যাসাগর মহাশয়ও কমিউনিষ্টদের চক্ষুশূল হন কখনো কখনো।
“সিরাজউদ্দৌলা, সিংহাসনে অধিরূঢ় হইয়া, মাতামহের পুরাণ কৰ্ম্মচারী ও সেনাপতিদিগকে পদচ্যুত করিলেন। কুপ্রবৃত্তির উত্তেজক কতিপয় অল্পবয়স্ক দুষ্ক্রিয়াসক্ত ব্যক্তি তাঁহার প্ৰিয়পাত্র ও বিশ্বাসভাজন হইয়া উঠিল। তাহারা, প্ৰতিদিন, তাঁহাকে কেবল অন্যায্য ও নিষ্ঠুর ব্যাপারের অনুষ্ঠানে পরামর্শ দিতে লাগিল। ঐ সকল পরামর্শের এই ফল দর্শিয়াছিল যে, তৎকালে, প্ৰায় কোনও ব্যক্তির সম্পত্তি বা কোনও স্ত্রীলোকের সতীত্ব রক্ষা পায় নাই।”
(বাঙ্গালার ইতিহাস, প্রথম অধ্যায়, শ্রীযুক্ত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর)
বামপন্থী ইতিহাস লেখক অসিত বন্দোপাধ্যায় এ কারণে বিদ্যাসাগরকে “সাম্রাজ্যবাদী ও ইসলামবিদ্বেষী” বলে অবিহত করেন। তিনি লেখন, “বিদ্যাসাগর প্রায় মার্শম্যানের অবিকল অনুবাদ করিয়াছেন। মার্শম্যানের সাম্রাজ্যবাদী ও ইসলামবিদ্বেষী দৃষ্টিভঙ্গিমাও তিনি হুবহু স্বীকার করিয়া লইয়া অনুবাদ করিয়াছেন”।
হিন্দুধর্মকে কলুষ মুক্ত করতে গিয়ে তৎকালীন রক্ষণশীল সমাজে বজ্রাঘাত করেছিলেন বিদ্যাসাগর। কিন্তু এজন্য তাঁকে ‘হিন্দু বিদ্বেষী’ হতে হয়নি। কিন্তু লম্পট সিরাজের চরিত্র উদ্ঘাটন করার দোষে তাঁকে ‘ইসলাম বিদ্বেষী’ তকমা দিলেন কমিউনিষ্ট বুদ্ধিজীবী।
নকশালরা বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভেঙ্গেছিলো কারণ তিনি তাদের দৃষ্টিতে বুর্জোয়া সাম্রাজ্যবাদী। তাঁকে ‘ইসলাম বিদ্বেষী’ বলতেও বামপন্থী ঐতিহাসিকদের আটকায়নি। কারণ তিনি নবাব সিরাজদৌলার সমালোচনা করেছিলেন।
হিন্দুধর্মের প্রতি অকারণ বিদ্বেষ ও কটূক্তি তিনি কখনোই মেনে নেন নি। একসময় সুপ্রিম কোর্টের এক বিচারক একটি মামলার রায়দানের সময় প্রসঙ্গ-বহির্ভূতভাবে হিন্দুধর্ম সম্পর্কে কটূ কথা বলেছিলেন, অশালীন কথা বলেছিলেন; তার প্রবল প্রতিবাদ করেছিলেন বিদ্যাসাগর, গর্জে উঠেছিলেন তিনি। কলকাতায় রাজা রাধাকান্ত দেবের প্রাসাদে অনুষ্ঠিত এক প্রতিবাদ সভায় নেতৃত্ব দিলেন বিদ্যাসাগর। পাঁচ হাজার গণ্যমাণ্য মানুষের স্বাক্ষর সম্বলিত একটি চিঠি পাঠালেন ইংল্যান্ডের ব্রিটিশ সেক্রেটারিয়েটে। চিঠির গুরুত্ব অনুভব করে ব্রিটিশ সেক্রেটারিয়েট ভারত সরকারকে নির্দেশ দিল, সুপ্রিম কোর্টের সেই বিচারকে সতর্ক করে দিতে হবে। জয় হল বিদ্যাসাগরের, জয় হল হিন্দুর।
তাঁর স্নেহধন্য ও পারিবারিক চিকিৎসক ডাক্তার অমূল্য চরণ বসু একবার বিদ্যাসাগরের ধর্মবোধ ও কর্তব্য সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, “গীতার উপদেশ অনুসারে চললেই ভালো হয়।”