
বাংলাদেশে একের পর এক হিন্দু অত্যাচারের ঘটনা। কোথাও হিন্দুদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিচ্ছে তো কোথাও মঠ-মন্দির ভেঙ্গে দিচ্ছে। কোথাও হিন্দু নারী কে ধর্ষণ করছে তো কোথাও হিন্দু পুরুষকে শিরোচ্ছেদ করছে। স্থানীয় সংবাদ সূত্রে মোটামুটি এই ঘটনা গুলিই এখন বাংলাদেশের হিন্দু সমাজের জীবন সঙ্গী হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বাংলাদেশের কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার পূর্বধইর পূর্ব ইউনিয়নের বাঙ্গরা থানার কোরবানপুর গ্রামে ১লা নভেম্বর তারিখ বিকেলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ধর্ম অবমাননার দায়ে হাজার হাজার মুসলমান হিন্দু সম্প্রদায়ের ছয়টি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করে লুঠপাট করে । নারীদের শ্লীলতাহানি করে ।
এই ঘটনার পর ক্ষোভে ফেটে পরে পশ্চিমবঙ্গের বাঙালী হিন্দুরা। বাংলাদেশের হিন্দু রা একটি প্রেস কনফারেন্স করে সমগ্র হিন্দু সমাজের কাছে সহযোগিতা চান। পশ্চিমবঙ্গের হিন্দু সংঘটন হিন্দু সংহতি এগিয়ে আসে। তারা ঘোষণা করে বাংলাদেশি হিন্দুদের পাশে দাঁড়িয়ে পশ্চিমবঙ্গ থেকে লড়াই করবে তারা। আর সেই মর্মে সংঘটনের সভাপতি দেবতনু ভট্টাচার্য্য মঙ্গলবার একটি ফেসবুক পোস্ট করে তাদের দাবি ও কর্ম পরিকল্পনা সর্ব সম্মুখে আনেন।
তিনি বলেন…….
“বাংলাদেশী মুসলমানদের চালু ভিসা বাতিল করা হোক, নতুন ভিসা দেওয়া বন্ধ করা হোক। হিন্দু সংহতি বিদেশ মন্ত্রকের কাছে এই ভিসা বাতিলের দাবি জানাচ্ছে।”
“কলকাতার বিশেষ কয়েকটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিতভাবে আবেদন জানানো হবে যে বাংলাদেশে হিন্দু নির্যাতনের প্রতিবাদে তারা যেন বাংলাদেশী মুসলমানদের চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়।”
“সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কাছে আবেদন, তারা বাংলাদেশী মুসলমান ছাত্রছাত্রীদের অবিলম্বে বহিষ্কার করে দেশে ফেরত পাঠাক।”
“সমস্ত ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের কাছে আবেদন, আপনারা বাংলাদেশের সাথে ব্যবসা বন্ধ করে এই হিন্দু নির্যাতনের প্রতিবাদ জানান।”
আর এই দাবি গুলোকে সামনে রেখে এইদিন অর্থাৎ বুধবার থেকেই হিন্দু সংহতি আন্দোলনে নামে। এই দিন হিন্দু সংহতির কার্যকর্তাদের 100-150 জনের একটা টীম মেডিকা এবং পিয়ারলেস হাসপাতালে যায়। যাদবপুর ডিভিশনের সভাপতি ঋত্বিক গাঙ্গুলীর নেতৃত্বে হিন্দু সংহতির একটি প্রতিনিধি দল দুই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে দেখা করে। লিখিত দাবী পত্র দেবার পাশাপাশি বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করে। দুই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে তারা জানিয়েছে বাংলাদেশে হিন্দু নির্যাতনের পরিপ্রেক্ষিতে এখানে যেভাবে জনরোষ বাড়ছে, তার কথা মাথায় রেখে তাদের এই আবেদনকে যেন লঘু করে না দেখা হয়।
সংঘটনের সাধারণ সম্পাদক রজত রায় জানান ” বাংলাদেশের হিন্দু বাঙ্গালীরা বছরের পর বছর ধরে ইসলামিক মৌলবাদের বর্বরতার শিকার হয়ে আসছে। এবারেও ফ্রান্সের সাম্প্রতিক ঘটনাবলির পর সে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হয়ে চলেছে। কোন কারণ ছাড়াই হিন্দুদের উপর পাশবিক অত্যাচার চলছে। উন্মত্ত মুসলিম জনতা(পরোক্ষভাবে সরকারী মদতে) হিন্দু মহল্লায় যখন তখন নারকীয় নিপীড়ন নামিয়ে আনছে।” তিনি আরো বলেন ” হিন্দু সংহতি মনে করে যে এই অবস্থায় ভারতবর্ষের বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের হিন্দুরা নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করতে পারে না। ওই হিন্দু বাঙ্গালীরা আমাদের ভাই, বন্ধু, পরিজন। তাদের সঙ্গে আমাদের রক্তের সম্পর্ক। তাদের পূর্বপুরুষ, বিনয় বোস, মাস্টারদা সূর্য সেন, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদাররা আত্মবলীদান দিয়েছিলেন ভারতবর্ষের স্বাধীনতার জন্যে। তাদের বিষয়ে আমরা উদাসীন থাকলে আমরা ইতিহাসের কাছে অপরাধী বলে পরিগণিত হবো। তাদের পাশে থাকার বার্তা দিতে হিন্দু সংহতি বিভিন্ন কার্যক্রমকে সামনে রেখে রাস্তায় নামছে।”
সংঘটনের আরেক সাধারণ সম্পাদক সুজিত মাইতি বলেন ” আজকে আমাদের কর্মসূচী ছিলো কলকাতার প্রখ্যাত দুটি চিকিৎসা কেন্দ্র, মেডিকা এবং পিয়ারলেস হাসপাতাল, যেখানে প্রচুর সংখ্যক বাংলাদেশী মুসলমান চিকিৎসা করাতে আসে, তাদের কর্তৃপক্ষের কাছে এই মর্মে লিখিত দাবী রাখা যে তারা যেন বাংলাদেশী মুসলিমদের চিকিৎসার সুযোগ না দেন। কারণ ওই বাংলাদেশী মুসলিমরা তাদের দেশে হিন্দুদের উপর অত্যাচারের বিরুদ্ধে একটি কথাও বলে না। তারা হয় প্রত্যক্ষভাবে অথবা পরোক্ষভাবে জেহাদি মুসলিমদের হাত শক্ত করে। তাদের নীরবতাও জেহাদি মুসলিমদের প্রচ্ছন্ন সমর্থন যোগায়। সেজন্যে ভারত থেকে তারা যেন সামান্যতম চিকিৎসা পরিষেবাও না পায়। তবেই তাদের হুশ ফিরবে। বুঝবে যে হিন্দু বাঙ্গালীরা বাংলাদেশে নিরাপদ না থাকতে পারলে তারা পশ্চিমবঙ্গে এসে চিকিৎসা করাতে পারবে না।”
হিন্দু সংহতির সহ-সভাপতি চন্দন রায় সংবাদ মাধ্যম কে বলেন ” হিন্দু সংহতি হিন্দুদের উপর বাংলাদেশে অত্যাচার বন্ধ না হলে ব্যবসায়িক এবং শিক্ষাক্ষেত্রেও যেন বাংলাদেশী মুসলিমরা ভারতে বিন্দুমাত্র সুযোগ না পায়, সে বিষয়েও কার্যকরী ব্যবস্থা নেবার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলির কাছে লিখিতভাবে জোরালো দাবী জানাচ্ছে।”
ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের কাছে পাঠানো লিখিত দাবী পত্রে হিন্দু সংহতির কেন্দ্রীয় সভাপতি দেবতনু ভট্টাচার্য উল্লেখ করেছেন যে ” বাংলাদেশের হিন্দু বাঙ্গালীদের রক্ষার বিষয়ে ভারত সরকারের ভূমিকা হতাশাব্যঞ্জক। ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী বলতেন যে পূর্ববঙ্গের হিন্দুদের রক্ষার দায়িত্ব ভারতবর্ষের। Hindus of East Bengal are entitled to the protection of India. সেই মহান ব্যক্তিত্বের হাতে তৈরী হওয়া দলের উত্তরসূরী দলের সরকার কেন্দ্রে চলছে। তারপরেও এই বিষয়ে আশ্চর্যজনক নীরবতা অত্যন্ত দুঃখজনক। হিন্দু সংহতি বাংলাদেশের হিন্দুদের রক্ষার জন্য সামরিক হস্তক্ষেপই একমাত্র পথ বলে মনে করে। তবে আপাতত সব বাংলাদেশী মুসলমানের ভারতে ভিসা বাতিল করা হোক। ভারত থেকে তারা যেন সামান্যতম সুবিধাও না পায়। বাংলাদেশের হিন্দুদের সুরক্ষা যে প্রথম প্রায়োরিটি, সেটা ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে ওদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষকে বোঝাতে হবে।”


