
আবারো অশান্তি শুরু হলো হুগলী জেলার জাঙ্গিপাড়া বিধানসভার চাচোয়া শ্যামপুর এলাকায় । গত ২৫/১০/২০২০ তারিখে আব্বাস সিদ্দিকির লোকেরা মহামান্য আদালতের নির্দেশকে অমান্য করে পুনরায় বেআইনি নির্মাণ শুরু করে।তা দেখে স্থানীয় হিন্দু চাষীরা এর বিরোধীতা করে। স্বাভাবিক ভাবেই আব্বাস সিদ্দিকীর লোকেদের সাথে স্থানীয় চাষীদের অশান্তি শুরু হয়। জাঙ্গিপাড়া থানার সাব ইন্সপেক্টর বিশাল পুলিশ বাহিনী নিয়ে তৎক্ষণাৎ ঘটনাস্থলে পৌছান।
এই ঘটনার সূত্রপাত দীর্ঘদিনের , ফুরফুরা শরীফের পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকি ফুরফুরা শরীফ নলেজ সিটির নামে হুগলী জেলার জাঙ্গিপাড়া বিধানসভা এলাকার কোতুলপুর পঞ্চায়েতে ১২০ বিঘা জমি জোর করে দখল করে। সেই জমির উপর নলেজ সিটি উদ্ভোধনের জন্য ফুরফুরা শরীফ এ এক বিশাল জমায়েত ও হয় ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে। সেই জমায়েত থেকে আব্বাস সিদ্দিকি ঘোষণা করে যে চাষী রা স্বইচ্ছায় জমি দান করেছে নলেজ সিটির জন্য। কিন্তু স্থানীয় মানুষ বলছে অন্য কথা, তাদের মতে জমি চাষ করা কৃষকদের জোর করে উচ্ছেদ করা হচ্ছে ,তাদের ভয় দেখানো হচ্ছে,নুন্যতম দামে তাদের জমি বিক্রি করতে বাধ্য করা হচ্ছে ।এই চাষী দের মধ্যে সিংহভাগ চাষীই হিন্দু,বাঙ্গালী হিন্দু । কোনো কোনো জায়গায় বেআইনি নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়েছে।
ওখানকার চাষীরা লোকাল তৃণমূল নেতৃত্বের সাথে যোগাযোগ করলে তারা সাহায্য করতে অস্বীকার করে। এরপর চাষীরা বিজেপি সহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের কাছেও সাহায্যের জন্য যায় কিন্তু তাতেও কোনো সুরাহা না হওয়ায় শেষে তারা যোগাযোগ করে হিন্দু সংহতির সাথে। হিন্দু সংহতির হাওড়া ডিভিশনের সভাপতি পার্থপ্রতিম ঘোষ বিষয় টিকে নিজে নেতৃত্ব দেন। চাষীদের দাবীর সত্যতা প্রকাশ্যে আনতে কাগজ জোগাড় করা হলে তাতে দেখা যায় যে জমিটি সত্যি বিতর্কিত এবং জোর পূর্বক অধিকৃত। এরপর হিন্দু সংহতির তরফ থেকে একটি প্রেস কনফারেন্সের মাধ্যমে বিষয় টিকে সকলের সামনে আনা হয় এবং চাষীদের দাবীর সপক্ষে বিশদ তথ্য জোগাড় করে চাষীদের আইনি সহায়তারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বিতর্কিত এই জমি টি নিয়ে হিন্দু সংহতি আদালতে যায় এবং আদালতে নির্দেশ হয় যে আদালতের অনুমতি ছাড়া ওই জমি তে কোনো রকম নির্মাণ কাজ করা যাবে না।
কিন্তু গত ২৫/১০/২০২০ তারিখে মহামান্য আদালতের নির্দেশকে অমান্য করে পুনরায় বেআইনি নির্মাণ শুরু হয় । আব্বাস সিদ্দিকীর বাহিনীর সাথে অশান্তি শুরু হয় সাধারণ গ্রামবাসী চাষীর। গ্রামবাসীরা অবৈধ নির্মাণ টি ভেঙ্গে ফেলে। দুপক্ষের মধ্যে মারামারি ও হয়। ঘটনাস্থলে বিরাট পুলিশ বাহিনী পৌঁছলেও এলাকায় এখনো উত্তেজনা রয়েছে। আব্বাস সিদ্দিকীর লোকেরা দাবী করছে তারা কোনো বে আইনি নির্মাণ করছে না। যদিও প্রশাসনের তরফ থেকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে পূজার পর স্থানীয় বি.ল.আর.ও অফিসে দুই পক্ষের সঙ্গে প্রশাসনের তরফ থেকে বসা হবে। এই বিষয় নিয়ে স্থানীয় তৃণমূল ও বিজেপির নেতৃত্বের তরফ থেকে কোনো রকম বক্তব্য পাওয়া যায় নি।
“আব্বাস সিদ্দিকিদের বিরুদ্ধে গিয়ে এই হিন্দু চাষীদের পক্ষে পশ্চিমবঙ্গে ময়দানে থাকা কোন রাজনৈতিক দল তো দাঁড়াচ্ছে না। দাঁড়াবেও না। সি পি আই (এম) দলটা তো আদ্যন্ত হিন্দু বিরোধী। কংগ্রেসের পশ্চিমবঙ্গে ভোটব্যাঙ্ক তো মুসলিম অধ্যুষিত এলাকাগুলি। মূলতঃ মুর্শিদাবাদ, মালদা, উত্তর দিনাজপুর। ওরা হিন্দুদের পক্ষে জীবনে কোনদিন কথা বলেনি। বলবেও না। পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের সুপ্রিমো নিজেই তো দুধেল গোরুর তত্ত্ব চালু করেছেন। তার নিজের বক্তব্য অনুযায়ী , তিনি ওদের তোষণ করবেন। একশোবার করবেন। ওরা তার দলকে দুধ দেয়। ওদের লাথি খেতে তার আপত্তি নেই। মূল বিরোধী দল বিজেপি র রাজ্য সভাপতি কয়েকদিন আগে আব্বাস সিদ্দিকিকে সম্বোধন করেছেন ‘সম্মানীয় ধর্মগুরু’ বলে। তাদের এখন মুসলিম ভোট কিছুটা চাই ই। সেটাই নাকি তাদের বঙ্গ বিজয়ের চাবিকাঠি। আব্বাস সিদ্দিকিরা এখন তাদের বন্ধুস্থানীয়।
তাহলে রাজনৈতিক ফ্রন্টে এই হিন্দু চাষীদের হয়ে কথা বলবে কে? তাদের উপর হওয়া অন্যায়ের প্রতিবাদ রাজনৈতিক মঞ্চে কে করবে?সবাই জানেন যে অরাজনৈতিক সংগঠনের চেয়ে রাজনৈতিক সংগঠনের দাবীর বিস্তার এবং ব্যাপকতা অনেক অনেক বেশী। প্রশাসনের কাছে। সংবাদ মাধ্যমের কাছে। প্রভাবশালী মহলের কাছে। এমনকি সাধারণ মানুষের কাছেও রাজনৈতিক দলের গতিবিধির কার্যকারিতা অরাজনৈতিক সংগঠনের চেয়ে বহুগুণ বেশী।
জাঙ্গিপাড়ার চাচোয়া শ্যামপুরের চাষীদের বিষয়টি একটি উদাহরণ মাত্র। এইরকম বহু ঘটনা বিভিন্ন জেলায়, বিশেষ করে হিন্দু সংখ্যালঘু এলাকায় প্রতিনিয়ত ঘটে চলেছে। হিন্দু বাঙ্গালীরা উৎপীড়িত, লাঞ্ছিত হচ্ছে।বহু ক্ষেত্রে তারা অসহায়। বহু খবর তো জানতেই পারা যায়না। কারণ ? কারণ একটাই। কোন রাজনৈতিক দল বাঙ্গালী হিন্দুর হয়ে সোচ্চার হতে রাজি নয়। “ভাইজানদের” ভোট হারাবার ভয়ে। এটাই কি বাঙ্গালী হিন্দুর পরিণতি?
পশ্চিমবঙ্গ যাদের হোমল্যান্ড, সেই বাঙ্গালী হিন্দুর হয়ে লড়াই করার জন্যে একটা রাজনৈতিক দলের কি প্রয়োজন নেই ? সে সময় কি এখনো আসেনি ?” প্রশ্ন তুলছেন হিন্দু সংহতির সর্ব ভারতীয় সাধারণ সম্পাদক রজত রায়।