- দেবাশীষ লাহা
কম্যুনিস্ট স্বর্গরাজ্য কিউবাতে ১৯৭৯ সাল থেকে গোহত্যা তথা গোমাংস ভক্ষণ শাস্তিযোগ্য অপরাধ। Article ২৮২ এবং ২৪১ এই নিষেধ নথিভুক্ত হয়েছে। Decree no ২৫৫ তে গোহত্যাকে একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। কেবল মাংস ভক্ষণ নয়, গরু কেনা বেচা বা লেনদেন পর্যন্ত নিষিদ্ধ। গৃহস্থ কেবল দুধ দোয়াতে পারেন। অন্য কাজে লাগাতে পারেন। আইন ঠিকঠাক মানা হচ্ছে কিনা তা দ্যাখার জন্য নিয়মিত অনুসন্ধান ও গরু গণনা হয়। গোমাংস নিয়ে ধরা পড়লে দশ বছর পর্যন্ত জেল হতে পারে। এতে কারও ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত লাগছে কিনা জানা নেই। আর লাগলেও কিছু করার নেই। খাদ্যের স্বাধীনতা, ধর্ম পালনের স্বাধীনতা, ব্যক্তি স্বাধীনতা ইত্যাদি নিয়ে কোনো আন্দোলনের কথাও শোনা যায় না। বিফ পার্টিও হয় না। দেশটা যে কিউবা। একটিই দল। কম্যুনিস্ট পার্টি। সে-ই ভাগ্যবিধাতা। আর কোন রাজনৈতিক দল সেখানে নেই। থাকার প্রশ্নই নেই। কারণ সেটা বেআইনি। আর তাই নির্বাচনের ঝামেলাও নেই। পান থেকে চুন খসলে যে ফেসবুকে জানাবেন, প্রতিবাদ করবেন, তারও উপায় নেই। মাসের মধ্যে একদিন ইন্টারনেট পেলে আপনার সৌভাগ্য। নেতা টেতা হলে অবশ্য ভিন্ন কথা।
যাচ্চলে! এসব কি বলছি! এ যে মহাপাপ! চে গুয়েভরা থুড়ি গুয়েভারা, কাস্ত্রোর দেশ! অর্থকরী দৃষ্টিভঙ্গিতে গোহত্যা নিষিদ্ধ হতেই পারে, সে মহান ব্যাপার। কিন্তু বৃহৎ ভাবাবেগে আঘাত লাগবে বলে গোহত্যা বন্ধ? নৈব চ নৈব চ! শুধু কি তাই? যে কোন সভ্য দেশে প্রাণিহত্যার ক্ষেত্রেও বিবিধ বিধিনিষেধ আছে৷ যেমন stunned করে হত্যা, ধর্মীয় হত্যার আগে অনুমতি নেওয়া, ভেটেনারি সার্জনের বাধ্যতামূলক উপস্থিতি ইত্যাদি ইত্যাদি। ও হরি তবে তো আবার হালাল হবেনা! ভাবাবেগে আঘাত লাগবে। আর তাই দমদম এয়ারপোর্টে একটি বেআইনি মসজিদটি নিছক ভাবাবেগের কারণেই ভাঙা তো দূরের কথা, বাবা বাছা করে অন্যত্র সরানো পর্যন্ত যাচ্ছে না। হাজার হাজার কোটি টাকা অনুমোদিত হয়ে পড়ে আছে। কিন্তু নতুন রানওয়ে তথা বিমানবন্দর সম্প্রসারণের কাজটি আটকে আছে।
কী বললেন? আপনি আধুনিক ভারত নির্মাণের পক্ষে? তাই ধর্ম নির্ভর খাদ্যাখাদ্য বিচার, কুসংস্কার ইত্যাদি থেকে বেরিয়ে আসতে চান? খাদ্য স্বাধীনতার পূজারি? বাহ বেশ! তা কমরেড কেবল হিন্দু ধর্মাবলম্বী মানুষকেই “সভ্য, আধুনিক” বানানোর টেণ্ডার নিলে যে আপনার জেণ্ডার চেঞ্জ হয়ে যাওয়ার আশংকা আছে। নিউজিল্যান্ডের হামলাটি কেন হল বলুন তো? আধুনিক আইন কানুন সবার জন্যই সমানভাবে প্রযোজ্য। একটি বিশেষ সম্প্রদায়কে মাথায় তুলে রাখলে পালটা প্রতিক্রিয়া হতে বাধ্য। তর্কের খাতিরে মেনে নিলাম আপনি প্রকৃতই ধর্মনিরপেক্ষ। আধুনিক জীবন যাপনে বিশ্বাস রাখেন। কথায় কথায় প্রথম বিশ্বের উদাহরণ দেন। কটি ইউরোপীয় রাষ্ট্রে প্রকাশ্যে হিজাব পরা, কোরবানির অনুশীলন নিষিদ্ধ হয়েছে জানেন? কোন দেশে কটি মসজিদ, কেন, কোন পরিপ্রেক্ষিতে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে খবর রাখেন? মসজিদ, মাদ্রাসায় যাতে বিদেশী টাকা না ঢুকতে পারে সেই উদ্দেশ্যে কোন কোন দেশ বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে জানেন কি? হা হা হা! আপনি যদি ধর্মনিরপেক্ষ হন, তবে ছাগলও মঙ্গলগ্রহের জীব। ধর্মের অনুভূতিতে আঘাত লাগতে পারে ভেবে আপনি অভিন্ন দেওয়ানি বিধির প্রস্তাবে হেঁচকি তোলেন, রাস্তা আটকে নামাজ পড়লে সম্প্রীতি আওড়ান, “সুশিক্ষিততম” রাজ্যটিতেও বাল বিবাহের অনুশীলনে কাঁড়ি কাঁড়ি ছানা প্রসব হলে মুখে কুলুপ আঁটেন! কেরালা মুর্শিদাবাদ, কোলন, বার্মিংহামে যে কোনো ফারাক নেই বেমালুম চেপে যান! আর সেই আপনিই গোরু খাওয়ার স্বাধীনতা আছে বলে আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে তোলেন! হে মহান বামাবতার! কেবল সংখ্যালঘুদিগেরই কি ধর্মীয় অনুভূতি আছে? সংখ্যাগুরুরা গরু পূজা করিয়া থাকে বলিয়াই কেবল পুচ্ছ নাচাইয়া সম্মতি জ্ঞাপন করিবে? ভরতের জন্মভূমিটি অদ্যপি কিউবা হইয়া ওঠে নাই, সুদূর ভবিষ্যতেও তাহা সম্ভব হইবে না, ইহা নরওয়ে সুইডেনও নহে।।এদেশের সিংহভাগ মানুষ অদ্যপি হিন্দু। ভাবাবেগ তথা ধর্মীয় অনুভূতি কেবল মুসলমানের সম্পত্তি নহে, হিন্দুদিগেরও তাহাতে সমান অধিকার। কবে কোন দেবতা গরু/ ষণ্ড ভক্ষণ করিয়াছিল তাহার “শাস্ত্র নির্ভর” ব্যাখ্যা প্রদান করিয়া এই হিন্দু ভাবাবেগকে দূরীভূত করা যাইবেনা। যেরূপ, দাড়ি, বোরখা, হিজাব, আকিদা ইত্যাদি লইয়াও ইসলামিক শাস্ত্রে অজস্র পরস্পর বিরোধী ব্যাখ্যা এবং বিশ্বাস বিদ্যমান। শিয়া সুন্নী আহমেদিয়ার বিভেদ এবং বিভাজন এখন দিবালাকের ন্যায় পরিস্ফুট। আপনি আমি কতটা মুক্তমনা, গোরু ভক্ষণ করি কি করিনা, তাহা অপেক্ষা অনেক বড় প্রশ্ন এদেশের সিংহভাগ মানুষ কোন ইচ্ছাটি পোষণ করেন। সংখ্যালঘুর ধার্মিক অনুভূতিকে সম্মান জানাইলে সংখ্যাগুরুর আবেগটিকেও শিরোধার্য করিতে হইবে। ইহাই বিজ্ঞান, ইহাই গণতন্ত্র। খাদ্যনীতি অর্থনীতির দোহাই দিয়া যতই ইহার অন্যথা ঘটিবে গরুটি ততই লেজের ব্যবহার কমাইয়া শিং নির্ভর হইয়া পড়িবে। তাহারই সূত্রপাত হইয়াছে। প্রকৃতিদেবী কেন তাহাকে এক জোড়া শিং প্রদান করিয়াছে,নিরীহ চতুষ্পদটি উপলব্ধি করিয়াছে। অনিবার্য ফলশ্রুতি হিসেবেই এই গোঁতানোর কার্যক্রম। অতএব হে বামাবতার, পশ্চাৎ দেশটি সামলাইয়া রাখুন।
Excellent write up.
LikeLike