
গোয়েন্দা সূত্রে জানা গিয়েছে, অসমের বরপেটার বাসিন্দা আব্দুল মতিন ২০১০ সাল নাগাদ মালদহের কালিয়াচকের একটি মাদ্রাসায় পড়াশোনা করে। সেই সময় সে জেহাদি সংগঠনের প্রতি আকৃষ্ট হয়। প্রথমে কালিয়াচকের মাদ্রাসায় জাহিরুল শেখের কাছে জেহাদি কার্যকলাপের শিক্ষা নেয় এবং পরবর্তীকালে বর্ধমানের শিমুলিয়ার মাদ্রাসায় খাগড়াগড়কাণ্ডে জড়িত ইউসুফের কাছে জেহাদি পাঠ সম্পূর্ণ করে।
তদন্তে গোয়েন্দারা জেনেছেন, কালিয়াচকে মতিনের জেহাদি চর্চায় খুশি হয়ে ইউসুফই তাকে শিমুলিয়ায় নিয়ে গিয়েছিল। সেখানকার পাঠ চোকানোর পর মুর্শিদাবাদের লালগোলার মুকিমনগর এলাকার একটি মাদ্রাসায় হাতকাটা নাসিরুল্লার কাছে তার বিস্ফোরক বানানোর তালিম শুরু হয়। আইইডি থেকে টাইম বোমা—সবই বানাতে সে শিখে যায় দ্রুত। এরপরে মুকিমনগরেই সে অন্যদের বিস্ফোরক তৈরির প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু করে।
২০১৪ সালে খাগড়াগড় বিস্ফোরণের কিছুদিন আগেই এরাজ্যে জেএমবি মডিউলের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে কাজ শুরু করে মতিন। সেই থেকেই ইউসুফ শেখ এবং কওসরের সঙ্গে তার পুরোদমে কাজ শুরু। আরও প্রশিক্ষণের জন্য এরপর সে বাংলাদেশে যায়। এমনকী সেখান থেকে বিভিন্ন সময় বিস্ফোরণের সামগ্রীও এরাজ্যে নিয়ে আসে। খাগড়াগড় কাণ্ডের পর সে ইউসুফের সঙ্গে বাংলাদেশে পালিয়েছিল। সেখানে কওসরের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়। এরপর কওসরের নির্দেশেই সে দক্ষিণ ভারতে ফিরে আসে। ২০১৬ সাল থেকে মতিন ফের জেএমবি’র নতুন মডিউল তৈরির কাজ শুরু করে। মূলত অসম এবং পশ্চিমবঙ্গের বাংলাভাষী যুবকরা, যারা বিভিন্ন রাজ্যে শ্রমিকের কাজ করে, তাদের ‘মস্তিষ্ক প্রক্ষালন’ করে জেহাদি প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু করে সে। এরপর কওসরের সঙ্গে ফের তার যোগাযোগ হয়। এমনকী বুদ্ধগয়ায় বিস্ফোরণ ঘটানো নিয়ে তাদের যে বৈঠক হয়েছিল, সেখানেও মতিন হাজির ছিল। বুদ্ধগয়ায় বিস্ফোরণের পর মতিন ফের মাঝেমধ্যেই এরাজ্যে আসা শুরু করে। জেএমবি’র পুরনো লোকজনকে ফের সক্রিয় করে তোলাই তার কাজ ছিল। কিন্তু শুধুমাত্র শ্রমিক দিয়ে সব কাজ হবে না, তাই অনুমোদনহীন মাদ্রাসার মাধ্যমে সেখানকার শিক্ষিত যুবকের জেহাদি প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু করে।
মুর্শিদাবাদ, মালদহ এবং উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন মাদ্রাসাই এবার মতিনের লক্ষ্য ছিল। পাশাপাশি বিস্ফোরক তৈরির প্রশিক্ষণও দেওয়া শুরু করেছিল সে। তদন্তে গোয়েন্দারা জেনেছেন, হায়দরাবাদ, বেঙ্গালুরু এবং কেরলে বসেই জেএমবি মডিউলগুলি সক্রিয় করা এবং বিস্ফোরক তৈরির প্রশিক্ষণ দিচ্ছিল মতিন। সম্প্রতি কওসরকে জিজ্ঞাসাবাদের সময় এসটিএফ মতিনের নাম পায়। সেই সূত্রেই তার খোঁজ চলে। অবশেষে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।