শবরীমালা মন্দিরে মহিলাদের প্রবেশের অধিকারের পক্ষে যারা আন্দোলন করছেন, নারীদের সমানাধিকার তাদের লক্ষ্য নয়। হিন্দুর শ্রদ্ধার কেন্দ্রগুলোকে আঘাত করে হিন্দুর আত্মবিশ্বাস ধ্বংস করে দেওয়ার পুরনো খেলারই একটা নতুন ইনিংস এই শবরীমালাকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে। মহিলারা মন্দিরে প্রবেশ করতে পারবেন না-এরকম কোনও নির্দিষ্ট নিয়ম হিন্দু ধর্মে নেই। বরং মন্দিরে পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের উপস্থিতিই সর্বত্র বেশি পরিমাণে দেখা যায়। সুতরাং ধর্মাচরণের অধিকারের প্রশ্নে মহিলাদের সাথে বৈষম্যমূলক আচরণের অভিযোগ কোনোভাবেই ধোপে টেকে না।
আচ্ছা মনে করুন, আজ সকাল সকাল সমস্ত গার্লস স্কুলের সামনে যদি ছেলেরা আন্দোলন শুরু করে, আমাদের প্রবেশের অনুমতি দিতে হবে, আপনি এটাকে কোন দৃষ্টিতে দেখবেন? একটা গার্লস স্কুলে ছেলেদের প্রবেশের অধিকার না দেওয়ার অর্থ কি ছেলেদের শিক্ষার অধিকার কেড়ে নেওয়া? ছেলেদের জন্য অথবা কো-এডুকেশন অনেক স্কুল আছে ভাই। শিক্ষাগ্রহণের সদিচ্ছা থাকলে সেখানে যাও। কিন্তু কেউ যদি জেদ ধরে বসে থাকে যে, আমাকে এই গার্লস স্কুলেই ঢুকতে দিতে হবে – তাহলে বুঝতে হবে যে শিক্ষাগ্রহণ বাদে তার অন্য কোথাও মতলব লুকিয়ে আছে এই জেদের পিছনে। বিশেষত এই ব্যক্তি যদি ছাত্র কিংবা ছাত্রী, শিক্ষক অথবা অশিক্ষক কর্মচারী অথবা ছাত্রের অভিভাবক – কোনভাবেই শিক্ষাক্ষেত্রের সাথে সম্পর্কিত না হন, শুধুমাত্র পুরুষ বলেই ছাত্রদের অধিকার রক্ষার তাগিদে তিনি গার্লস স্কুলে প্রবেশাধিকার চান, তাহলে তার এই উদ্যোগের পিছনে যে কোনো দূরভিসন্ধি আছে একথা ভাবা কি অযৌক্তিক হবে? মনে করুন বারুইপুর স্টেশনে ট্রেনের পুরুষ যাত্রীদের আন্দোলন চলছে – নারী পুরুষে বিভেদ করা মানছি না মানবো না। মহিলা কামরায় পুরুষদের প্রবেশাধিকার দিতে হবে। কি বলবেন? অনেকে হয়তো বলবেন, এগুলোতো সরকারের তৈরি করা ব্যবস্থা! আচ্ছা, কলকাতারই অনেক গগনচুম্বি বিল্ডিংয়ের মেইন গেটে লেখা থাকতে দেখেছি – সেলসম্যানদের প্রবেশ নিষেধ। কিংবা ভিক্ষুকদের প্রবেশ নিষেধ। সেলসম্যান কিংবা ভিক্ষুকদের আন্দোলন শুরু হলে কি বলবেন? তাঁরা আদালতের দ্বারস্থ হলে আদালতই বা কি রায় দেবে? এই ব্যবস্থা তো নিশ্চই সরকারের তৈরি নয়!
আমাদের দেশে সর্বসাধারণের জন্য আইনের পাশাপাশি মুসলমানদের জন্য মুসলিম পারসোনাল ল আছে. সেখানে মাত্র ১৫ বছর বয়সে একজন মুসলিম বালিকার বিয়ে দেওয়াকে বৈধতা দেওয়া হয়েছে। মহিলাদের অধিকার নিয়ে যারা লড়াই করছেন, তারা এই বিষয়ে সোচ্চার হচ্ছেন না কেন? ১৫ বছর বয়সী মুসলিম নাবালিকাদের অধিকার নেই ১৮ বছর বয়সে সাবালিকা হয়ে নিজের জীবনের সিদ্ধান্ত নিজে নেওয়ার? এর চাইতে শবরীমালায় প্রবেশাধিকারটা বেশী গুরুত্বপূর্ণ! পাশাপাশি সুপ্রীম কোর্টের ক্ষমতা আছে সেই ১৫ বছরের সেই মুসলিম নাবালিকাকে ন্যায়বিচার দেওয়ার? ক্ষমতা আছে, সাবালিকা হওয়ার আগে কেউ সেই মেয়েটির বিয়ে দিতে পারবে না –এই রায় দেওয়ার? কিন্তু শবরীমালা মন্দিরে মহিলারা কেন প্রবেশ করতে পারছে না, তা নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট যারপরনায় চিন্তিত! অযোধ্যায় রামমন্দিরের পক্ষে সমস্ত প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও একটার পর একটা ডেট পড়ে চলেছে, এক্ষেত্রে গোটা হিন্দু সমাজের জন্য Justice delayed is justice denied হচ্ছে না? অথচ শবরীমালায় সুপ্রিম কোর্ট অতি সক্রিয়! শবরীমালা মন্দিরে প্রবেশাধিকারের বিষয়টা আয়াপ্পার ভক্তদের সিদ্ধান্ত, পরম্পরাগতভাবে এই নিয়ম পালিত হয়ে এসেছে। আজকে এটা কাস্টমারী ল’য়ে পরিণত হয়েছে। এই আইন যদি পরিবর্তন করতে হয়, তার আবেদন আয়াপ্পার ভক্তদের মধ্য থেকে উঠে আসতে হবে, কোনো রেহানা ফতেমা কিংবা কোনো মেরী সুইটির আবেদনের ভিত্তিতে এই আইনের পুনর্বিবেচনা হতে পারে না।
আশ্চর্যের বিষয়, বোরখা পরে মুসলমান মহিলারা, যাদের বোরখা সরিয়ে খোলা বাতাসে শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার অধিকার তাদের নিজেদের ধর্ম তাদের দেয় না, তারা শবরীমালায় আয়াপ্পাভক্ত মহিলাদের অধিকার রক্ষায় মানব বন্ধন তৈরি করে আন্দোলন করছে। মোটের উপর কেরালায় রাজ্য সরকারের সহায়তায় কম্যুনিষ্ট-খ্রীস্টান-মুসলিম লবি একজোট হয়ে হিন্দু সমাজকে ধ্বংস করার খেলায় মেতে উঠেছে, শবরীমালা যার একটা উপলক্ষ্য মাত্র। এই পরিস্থিতিতে সারা ভারতের হিন্দু শক্তিকে কেরলের হিন্দুর পাশে দাঁড়াতে হবে। হিন্দুরা এই অন্যায় সহ্য করবে না। কেরলের আন্দোলন শুধুমাত্র কেরলের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না। কেরল সরকারের এই হিন্দু বিরোধী ভূমিকা অবিলম্বে বন্ধ না হলে সারা ভারতসহ পশ্চিমবঙ্গেও তার তীব্র প্রতিক্রিয়া হবে। কেরল সরকারের বহু প্রতিষ্ঠান ভারতের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে, কেরল থেকে নিয়ন্ত্রিত বহু চার্চ সারা ভারতে ছড়িয়ে আছে। শবরীমালার প্রতিক্রিয়ায় সেগুলো জনরোষের শিকার হওয়ার সম্ভাবনাকে মোটেই উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
শবরীমালা আন্দোলন নারী অধিকারের জন্য নয়, হিন্দু শক্তিকে ধ্বংস করার জন্য : দেবতনু ভট্টাচার্য
