–শ্রী রজত রায়।
মায়ানমারের রাখাইন প্রদেশে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা মুসলিমের বাস ছিলো। এক দশকের মধ্যে প্রায় ৬২৫০০০ সেখান থেকে সীমানা অতিক্রম করে বিভিন্ন দেশে আশ্রয়ের সন্ধানে যাত্রা শুরু করে।বাংলাদেশে তাদের মূল বলে সেখানেই প্রথমে প্রবেশ করে।কিন্তু কিছুদিন পর বাংলাদেশ সরকার ঘোষনা করে যে তারা আর নতুন করে কোন রোহিঙ্গাকে তাদের দেশে আশ্রয় দেবে না। হঠাৎ করে একদিন বিশ্বের বিভিন্ন দেশ লক্ষ্য করলো যে হাজার হাজার রোহিঙ্গা মুসলমান নৌকায় করে সমুদ্রে আশ্রয়ের সন্ধানে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাদের প্রথম লক্ষ্য ছিলো থাইল্যান্ড।কিন্তু সেখানকার উপকূলরক্ষী বাহিনী বা নেভি তাদের ঢুকতেই দেয় নি। মুসলমান দেশ তাদের আশ্রয় দেবে এই ধারনায় তারা মালয়েশিয়ায় যায়। সেখানকার সরকার তাদের সীমানাতেই ঢুকতে দেয় নি। এরপর তাদের লক্ষ্যস্থল হলো পৃথিবীর বৃহত্তম মুসলিম রাষ্ট্র ইন্দোনেশিয়া। কিন্তু সেখানকার উপকূলরক্ষী বাহিনীও তাদের সেই দেশের সীমানা স্পর্শ করার অনুমতি দেয় নি। সমুদ্রে আটকে পড়া কিছু মানুষকে ইন্দোনেশিয়ান জেলেরা উদ্ধার করেছিলো। সেখানকার সরকার জেলেদের সাবধানকরে দেয় যেন আর কোন রোহিঙ্গা মুসলিমকে তারা উদ্ধার না করে।মুসলমান দেশগুলো বিপদগ্ৰস্ত মুসলমানদের আশ্রয় দেয় নি।যারা বলেন যে মুসলমানরা একে অপরকে বিপদের সময় পাশে থাকে, ওদের দারুন একতা,ওদের থেকে একতা শিখতে হয়, তাদের ভ্রান্ত ধারনা দূর করার জন্যে এই উদাহরনই আশা করি যথেষ্ট।কোন মুসলমান দেশ শিশু ,বৃদ্ধ, মহিলাদের পর্যন্ত(সবাই মুসলমান) আশ্রয় দেয় নি। নৌকায় করে অবিশ্রাম সমুদ্রযাত্রার কারনে ওদের বিভিন্ন দেশের সাংবাদিকরা ‘boat people’ বলে অভিহিত করতো। সবদিকের দরজা বন্ধ দেখে ওরা ভারতকে লক্ষ্য হিসেবে বেছে নিলো। পৃথিবীতে ধর্মশালা তো একটাই। বর্তমানে প্রায় ৪০০০০ রোহিঙ্গা মুসলিম ভারতে আছে ।২০১৫ তে ছিলো ১০৫০০ , দুবছরের কিছু বেশী সময়ে সংখ্যা চারগুন বেড়ে গেলো। বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতারা এবং বিভিন্ন মুসলিম সংগঠন সরকারের উপর প্রবল চাপ শুরু করলো যে এদের ভারত থেকে বিতাড়িত করা চলবে না। কেন্দ্রীয় সরকার এদের অবৈধ অনুপ্রবেশকারী এবং জাতীয় নিরাপত্তার পক্ষে বিপজ্জনক বলে ঘোষনা করেছে বলে তারা কেন্দ্রীয় সরকারকে মানবতাবিরোধী বলে আখ্যায়িত করেছে। দুজন রোহিঙ্গা মুসলমান মহম্মদ সলিমুল্লা এবং মহম্মদ শাকিব(কিছু রোহিঙ্গা মুসলমান ২০১২ তে ভারতে এসে ভোটার কার্ড, আধার কার্ড সব করে নিয়েছিলো। তারা ভারতীয় নাগরিক হিসেবে কোর্টে মামলা করার অধিকারী হয়ে গিয়েছে।)সুপ্রিম কোর্টে রোহিঙ্গাদের এদেশে থাকতে দেবার দাবীতে মামলা করেছে। ওদের পক্ষে উকিল হিসেবে দাড়িয়েছে ফলি নরিম্যান, প্রশান্তভূষন, কপিল সিব্বাল,রাজীব ধাওয়ান, অশ্বিনীকুমার,কলিন গঞ্জালভেসের মতো প্রখ্যাত আইনজীবিরা। বুঝুন অবস্থাটা। কোন মুসলমান দেশ যাদের দেশে ঢুকতেই দিলো না সেই রোহিঙ্গা মুসলমানদের ভারতে স্থায়ীভাবে থাকতে দেবার জন্যে কিছু মানুষ এবং কিছু রাজনৈতিক দলের কি প্রাণপন প্রচেষ্টা। দেশের নিরাপত্তা এদের কাছে কোন অর্থই রাখে না। যদি এরা সরকার তৈরী করতে পারে তাহলে রোহিঙ্গা মুসলিমরা এদেশের নাগরিক হবার ঢালাও অধিকার পেয়ে যাবে। আমাদের রাষ্ট্রের সুরক্ষা চ্যালেঞ্জের মুখে এসে দাড়িয়ে পরবে। বাংলাদেশে লক্ষ লক্ষ হিন্দুর চরম নিপীড়নে যারা কোনদিন একবিন্দু চোখের জল ফেলে নি, তারা রোহিঙ্গা মুসলমানদের দুঃখে কেদে ভাসিয়ে দিচ্ছে। এই মানসিকতা সম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য এই দেশ ৯০০ বছর পরাধীন ছিলো। আবার কিন্তু অশনি সংকেত দেখা দিচ্ছে। সাধু সাবধান !(চলবে)