আন্তর্জাতিক পাচার চক্রের করিডর হয়ে উঠেছে উত্তর দিনাজপুর জেলার ভারত বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকা। গরু-মোষ থেকে শুরু করে কাফ সিরাপ, মদ, চোরাই মোটর বাইকের ইঞ্জিন সহ অনেক কিছুই এই সীমান্ত দিয়ে পাচার হয়। পাচারের পথে রুপোও এই জেলার সীমান্ত এলাকা থেকে উদ্ধার হয়েছে। মাঝেমধ্যে বিএসএফ পাচারকারীদের আটক ও পাচার সামগ্রী উদ্ধার করলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সীমান্তরক্ষীদের চোখে ধুলো দিয়েই পাচার চলছে। নজরদারি এড়াতে মাঝেমধ্যে পদ্ধতির পরিবর্তন করে পাচারকারীরা। এমনকী সীমান্ত এলাকায় বাংলাদেশের দিক থেকে সুড়ঙ্গ কাটার ঘটনাও ধরা পড়ে। চোরাচালানের বিকল্প রাস্তা বানাতেই ওই সুড়ঙ্গ কাটা হচ্ছিল বলে বিএসএফ ও পুলিসের গোয়েন্দারা জানান। জেলার ইটাহার ও চাকুলিয়া বাদে সমস্ত ব্লকেই বাংলাদেশ সীমান্ত রয়েছে। সীমান্তের বেশির ভাগ জায়গা কাঁটাতার দিয়ে ঘিরে রাখা হলেও কিছু জায়গায় এখনও কাঁটাতারের বেড়া নেই। চোপড়ার বড় বিল্লা ও গোয়ালগছ এলাকায় কাঁটাতারের বেড়া নেই। কিছু জায়গায় নদীই দু’দেশের সীমান্ত হিসেবে রয়েছে। করণদিঘির বোরধই, ভাটোল ও খুরকা এলাকার সীমান্তে নাগর নদী প্রবাহিত হয়েছে। এইসব উন্মুক্ত পথই চোরাচালানের কাজে বেশি ব্যবহার হয়। তবে কাঁটাতার কেটে গোরু পাচারের ঘটনাও এখানে ধরা পড়েছে। উদ্বেগজনক বিষয় হল প্রায় এক বছর আগে চোপড়ার ফতেপুর বিওপি এলাকায় বাংলাদেশের দিক থেকে ৮০ ফুট সুড়ঙ্গ খনন করে ফেলেছিল দুষ্কৃতীরা। পুলিস ও বিএসএফের গোয়েন্দা বিভাগের অনুমান, নির্বিঘ্নে চোরাচালান ও অনুপ্রবেশের জন্যই এই সুড়ঙ্গ খনন হয়েছিল।
সীমান্তে পাচারের কাজ যে বন্ধ হয়নি তার প্রমাণ এইসব এলাকায় বিভিন্ন সময়ই পাচারের নানা সামগ্রী উদ্ধার হয়। পাচারকারীদের সঙ্গে বিএসএফ জওয়ানদের সংঘর্ষও হয়। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সীমান্তের বিভিন্ন গ্রামে দিনের বেলায় গবাদিপশু সহ অন্যান্য পাচারের সামগ্রী জমা করা হয়। সীমান্তে অনেকগুলি বড় বড় হাট আছে। সেখানে গোরু কেনাবেচা হয়। হাটগুলি থেকে গোরু কিনে পাচারকারীরা পায়ে হাঁটিয়ে একেবারে সীমান্ত লাগোয়া এলাকার গ্রামে জমা করে রাখে। রাতে অন্ধকার নামতেই শুরু হয় অপারেশন। দুষ্কৃতীরা সুযোগ বুঝে কাঁটাতার কেটে ওপারে গোরু পাঠিয়ে দেয়। সম্প্রতি হেমতাবাদের বিষ্ণুপুর পঞ্চায়েতের করইডাঙ্গি গ্রামে পাচারের জন্য মজুত গোরু উদ্ধার করতে গেলে বিএসএফের সঙ্গে গ্রামবাসীদের সংঘর্ষ হয়। কাফ সিরাপ ও নেশার বিভিন্ন সামগ্রী প্যাকেট করে এপার থেকে ছুঁড়ে ওপারে ফেলা হয়। গোয়ালপোখরের ফুলবাড়ি, দেবীগঞ্জ সহ অনেক এলাকাই পাচারকারীদের দখলে। বামনবাড়ি এলাকায় পাচারের আগেই বিএসএফ ১৫ কেজি রুপো উদ্ধার করেছিল। আবার সম্প্রতি পাঞ্জিপাড়া ও ইসলামপুরে তক্ষক উদ্ধার হয়েছিল। সেগুলি বাংলাদেশে পাচার করার উদ্দেশ্যে আনা হয়েছিল।