ভারতের উত্তর-পূর্ব সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশ থেকে অবৈধভাবে মায়ানামারের রোহিঙ্গা মুসলিমরা ভারতে প্রবেশ করছে। গত বৃহস্পতিবার গুয়াহাটির একটি বাস থেকে ১৮ রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়েছে। খবরে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের শরণার্থী শিবিরে বসবাসকারী এইসব রোহিঙ্গাদের মধ্যে অন্তত পাঁচজনের কাছে রাষ্ট্রসঙ্ঘের শরণার্থী সংস্থার দেওয়া পরিচয়পত্র পাওয়া গিয়েছে। জানা গিয়েছে, ধৃতরা দিল্লি যেতে চাইছিল। এসব রোহিঙ্গাকে খোয়াই জেলার তেলিয়ামুরা থেকে আটক করে ত্রিপুরা পুলিস। ধৃতদের মধ্যে ১১ পুরুষ, তিন মহিলা ও চার শিশু রয়েছে। তাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর ত্রিপুরা পুলিস জানিয়েছে, ধৃত রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের চট্টগ্রামের রোহিঙ্গা শিবিরে বসবাস করত। অন্য অনেক রোহিঙ্গাদের মতো তারাও ত্রিপুরার সিপাহিজলা জেলার সোনামুরা সীমান্ত দিয়ে ভারতে প্রবেশ করে।
জিজ্ঞাসাবাদে ধৃত রোহিঙ্গারা তাদের দেশ ছেড়ে পালানোর তথ্য দিয়েছে। আটক করা তিন রোহিঙ্গা পুরুষের সঙ্গে এজেন্টরা যোগাযোগ করে। প্রথমে তাদের মালয়েশিয়ায় কাজের প্রস্তাব দিয়ে বাংলাদেশে নিয়ে আসা হয়। তিন দিন তারা সেখানে ছিল। পরিবারসহ মালয়েশিয়া যেতে এজেন্টকে তারা প্রায় ২২ লাখ কিয়াট (মায়ানমারের মুদ্রা) দেয়। বাংলাদেশ থেকে তারা সোনামুরা সীমান্ত দিয়ে ভারত প্রবেশ করে।গত বছরের আগস্টে রাখাইন রাজ্যে মায়ানমারের সেনাবাহিনী ও রোহিঙ্গাদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হলে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা। একই সময়ে ভারতে আগে থেকেই বসবাস রোহিঙ্গাদের বিতাড়িত করার উদ্যোগ নেয় কেন্দ্র। গত বছরের সেপ্টেম্বরে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র রাষ্ট্রমন্ত্রী কিরেন রিজিজু রোহিঙ্গাসহ বেআইনি অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করে দেশ থেকে বের করে দিতে সব রাজ্যকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে সংসদে জানান। পরে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন সেখানে বসবাসকারী রোহিঙ্গারা। সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপে আপাতত আটকে রয়েছে ওই প্রক্রিয়া। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং উত্তর পূর্ব রাজ্যগুলিকে সতর্ক করে দিয়ে জানান, এইসব রাজ্যের সীমান্ত দিয়ে নতুন করে রোহিঙ্গারা অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করতে পারে। মানবপাচারকারীরা ভারত-বাংলাদেশ ও ভারত-মায়ানমার সীমান্ত ব্যবহার করে রোহিঙ্গাদের ভারতসহ অন্য দেশে পাঠানোর চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ। ত্রিপুরায় রোহিঙ্গা আটকের ঘটনা এবারই প্রথম নয়। গত ১৪ জানুয়ারি উত্তর ত্রিপুরার ধর্মনগর রেল স্টেশন থেকে ৬ রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়। গত বছরের ২৯ নভেম্বর পশ্চিম ত্রিপুরার খয়েরপুর মার্কেট এলাকা থেকে আটক করা হয় আরও ৮ রোহিঙ্গাকে।