জাল ভারতীয় টাকা পাচারের জন্য খ্যাত মালদহ করিডর দিয়ে এবার আসল বাংলাদেশি টাকা পাচারের ঘটনা প্রকাশ্য এল। খাঁটি বাংলাদেশি টাকা ভারতীয় ভূখণ্ড থেকে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে ছুঁড়ে দেওয়ার এই বেনজির ঘটনার সাক্ষী হয়েছে সীমান্ত রক্ষী বাহিনী। সোমবার ভোররাতে মালদহের মহদিপুর দিয়ে এভাবেই টাকা ছুঁড়ে দেওয়ার সময় প্রায় ১১ লক্ষ টাকার বাংলাদেশি নোট বিএসএফ বাজেয়াপ্ত করেছে। এই ঘটনায় কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। তবে বিষয়টি নিয়ে বিএসএফ ও গোয়েন্দারা নড়েচড়ে বসেছে। সাধারণত উত্তর ২৪ পরগনার ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে চোরাপথে বাংলাদেশি টাকা সেদেশে পাঠানো হয়। জালনোটের স্বর্গরাজ্য এই এলাকাকে বাংলাদেশি টাকা পাচারের বিকল্প কেন্দ্র হিসাবে বাছা হয়েছে কি না তা নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে।
গোয়েন্দাদের একাংশ মনে করছে এরসঙ্গে হাওয়ালার যোগ থাকতে পারে। পাশাপাশি গোয়েন্দাদের আরেকটি অংশের মতে, বাংলাদেশি ১০০ টাকা বৈধ হস্তান্তরে ভারতীয় মুদ্রায় ১৫ টাকা কমে যায়। টাকর মূল্য যাতে না কমে তারজন্য অনেক ক্ষেত্রেই বৈধভাবে টাকা লেনদেন হয় না। সেই অবৈধ লেনদেনের টাকা অর্থাৎ কালো টাকা ফের বাংলাদেশে পাঠানোর একটি চক্র সক্রিয় আছে। মালদহের সীমান্ত দিয়ে জালনোট পাচারের সহজসাধ্য পথে এবার বাংলাদেশি কালো টাকাও এই সীমান্ত দিয়ে পাঠানোর পরিকল্পনা হতে পারে।
বিএসএফের দক্ষিণবঙ্গের সিনিয়র জনসংযোগ আধিকারিক রবিরঞ্জন বলেন, পাচারকারীকে ধরা না গেলেও আমরা ১০ লক্ষ ৯৭ হাজার টাকার বাংলাদেশি নোট বাজেয়াপ্ত করেছি। এরমধ্যে ১০০০ টাকার ৭৮০টি নোট, ৫০০ টাকার ৬২৯টি নোট এবং ১০০ টাকার ২৫টি নোট পাওয়া গিয়েছে। আগে এই সীমান্তে এধরনের ঘটনা প্রকাশ্যে আসেনি। কেন এভাবে টাকা পাঠানো হচ্ছিল তা আমারা জানার চেষ্টা করছি।
বিএসএফ সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার রাতে মহদিপুরের লোধিয়া আউট পোস্ট দিয়ে টাকা পাচারের বিষয়ে নিশ্চিত তথ্য বিএসএফ কর্তাদের কাছে আসে। তারপরেই দ্রুত দু’টি বিশেষ দল তৈরি করে সীমান্তে গোপন নজরদারি শুরু হয়। ভোররাতে ভারতীয় ভূখণ্ড ও বাংলাদেশি ভূখণ্ডে একইসঙ্গে পাচারকারীদের আনাগোনা টের পাওয়া যায়। তখনই বিএসএফ অভিযান চালায়। একজন পাচারকারী তাড়াহুড়োতে একটি প্যাকেট বাংলাদেশে ছুঁড়ে দেওয়ার চেষ্টা করে পালিয়ে যায়। তাকে ধরা না গেলেও তল্লাশি চালিয়ে প্লাস্টিকে মোড়া প্যাকেট পাওয়া যায়। তার ভিতর থেকে ওই বাংলাদেশি টাকা মেলে।
বিএসএফ ও গোয়েন্দা সূত্রে জানা গিয়েছে, ভারতীয় টাকায় ওই পরিমাণ বাংলাদেশি টাকার দাম আট লক্ষ ৫৫ হাজার টাকা। আর এখানেই মালদহ সীমান্তকে ব্যবহার করে টাকা বাংলাদেশ পাঠানোর মূল চাবিকাঠি লুকিয়ে রয়েছে। সম্ভবত এদেশে এই টাকার লেনদেন অবৈধভাবে হয়েছে। অর্থাৎ ক্রেতা কিছু বেশি টাকা দিয়ে অবৈধভাবে বিক্রেতার কাছ থেকে তা কিনেছে। এভাবেই জমা হওয়া বিপুল পরিমাণ টাকা কোনওভাবে বাংলাদেশে পাঠাতে পারলে তা পুরো দামেই বিক্রি হয় এবং বিপুল লাভ হয়। সেই কারণেই এই টাকা পাঠানো হচ্ছিল