মুর্শিদাবাদ জেলার বহরমপুর শহরে ৬লক্ষ টাকার জালনোট সহ পুলিসের জালে ধরা পড়ল তিন ব্যক্তি। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শহরের বানজেটিয়া এলাকায় পুলিস ও স্পেশাল অপারেশন গ্রূপ(এসওজি)যৌথ অভিযান চালিয়ে ওই তিন জালনোট পাচারকারীকে পাকড়াও করে। ধৃতদের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া বান্ডিলে ৫০০ ও ২০০০টাকার জাল নোট ছিল। ধৃতদের জেরা করে বাংলাদেশে ঘাঁটি গেড়ে থাকা জালনোট কারবারের এক ডিস্ট্রিবিউটরের নাম জানতে পেরেছে পুলিস। সে জেএমবির বাংলাদেশ শাখাকে অর্থের জোগান দেয় বলে বলে গোয়েন্দাদের ধারণা। সমগ্র ঘটনা সম্পর্কে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলির কাছে পুলিস রিপোর্ট পাঠিয়েছে বলে জানা গিয়েছে। পুলিস সুপার মুকেশ কুমার বলেন, ধৃত জালনোট কারবারিদের বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট মামলা রুজু করা হয়েছে। ঘটনার সমস্ত দিক গুরুত্ব দিয়ে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
কয়েকদিন আগে ফরাক্কা থানা এলাকায় জালনোট সহ মা ও ছেলেকে গ্রেপ্তার করে পুলিস। এরপর সামশেরগঞ্জ থানার পুলিস বিস্ফোরক সমেত এক ম্যাজিক ভ্যান চালক ও তিন জালনোট পাচারকারীকে গ্রেপ্তার করে। ধৃত ম্যাজিক ভ্যানের চালক জেএমবির সদস্য বলেই পুলিস জানতে পেরেছে। ধৃতদের কাছ থেকে চাঞ্চল্যকর কিছু তথ্য জানার পর জেলা পুলিস জালনোটের বিরুদ্ধে অভিযানে নামে। সেই মতো বৃহস্পতিবার সকালে পুলিস ও এসওজি বানজেটিয়া এলাকায় জাল বিছায়। পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, দুপুরের দিকে ওই তিন ব্যক্তি বাজারের ব্যাগ হাতে সেখানে আসে। দীর্ঘক্ষণ তারা সেখানে দাঁড়িয়ে ছিল। নিজেদের মধ্যে হিন্দুস্থানি ভাষায় কথা বলছিল। সন্ধ্যার দিকে তাদের পরিচয় জানতে চাইলে তারা ইতস্তত করে। দু’জন এলাকা ছেড়ে পালানোর চেষ্টা করে। তখন তাদের ধরে তল্লাশি চালিয়ে বিপুল পরিমাণ জালনোট উদ্ধার করা হয়।
পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, ধৃতদের নাম মতিউর রহমান(৫০), রাবু মিঞা(৭৫) ও মদন মণ্ডল(৫০)। মালদহের কালিয়াচক থানার গোপালনগরে ধৃতদের বাড়ি। বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী শ্মশানী ও চরিঅনন্তপুর গ্রাম দু’টির মাঝখানে গোপালনগর অবস্থিত। মাঝখানে নিষ্ক্রিয় হয়ে গেলেও শ্মশানী ও চরিঅনন্তপুরে ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে জালনোট পাচারকারীরা। সংশ্লিষ্ট দু’টি এলাকায় কাঁটাতারের বেড়ার উপর দিয়ে এপারে জালনোটের বান্ডিল আসছে বলে পুলিস জানতে পেরেছে। একই সঙ্গে পুলিসের সন্দেহ, পুলিসের নজর এড়াতেই জালনোটের কারবারে বয়স্কদের নামানো হয়েছে। পুলিস সুপার বলেন, ধৃতদের কাছ থেকে ৬লক্ষ টাকার জালনোট মিলেছে। এরমধ্যে ৩৮৮টি ৫০০টাকার এবং ২০৩টি ২০০০টাকার জালনোট আছে। ধৃতদের কাছ থেকে দু’টি মোবাইল ফোন এবং মালদহ-বহরমপুর বাসের টিকিট মিলেছে।
শুক্রবার ধৃতদের বহরমপুর সিজেএম আদালতে তোলা হলে বিচারক ধৃতদের পাঁচদিন পুলিসি হেফাজতের নির্দেশ দেন। পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘটনার দিন রাত থেকে এদিন সকাল পর্যন্ত ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে বাংলাদেশের চাপাইনবাবগঞ্জ জেলার তেলকুপি গ্রামের বাসিন্দা বাবলু মিঞা ওরফে সাফিজুদ্দিনের নাম জানা গিয়েছে। বাবলু জালনোটের ডিস্ট্রিবিউটর। বাংলাদেশের মনাকষা, তেলকুপি ও শিবগঞ্জে তার ঘাঁটি। মালদহের কালিয়াচক ও বৈষ্ণবনগর সীমান্ত দিয়ে জালনোটের কারবার নিয়ন্ত্রণ করে বাবলু। এক্ষেত্রে মূলত গঙ্গার রাজনগরঘাট ও চর ব্যবহার করা হয়। পাশাপাশি, বাবলুর জেএমবির ফাইনান্সার বলে গোয়েন্দারা জানতে পেরেছে। তবে, জিজ্ঞাসাবাদের সময় ধৃতরা নিজেদের মধ্যে গোলমাল করে পুলিসকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছে বলেও জানা গিয়েছে।
পুলিস সুপার বলেন, ধৃতদের কাছ থেকে বাংলাদেশে ঘাঁটি গেড়ে থাকা বাবলুর নাম জানা গিয়েছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এছাড়া, ধৃতরা বহরমপুর ও বেলডাঙার কয়েকজনের নাম জানিয়েছে। তাদের খোঁজ শুরু হয়েছে।