তারাপীঠ মন্দিরের পর এবার কালীঘাটের কালী মন্দিরের সংস্কার এবং উন্নয়নের নির্দেশ দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর তাই মুখ্যমন্ত্রীর ইচ্ছা মেনে নতুন করে সাজছে কালীঘাট মন্দির৷ তার জন্য কোমর বেঁধে নামেছে কলকাতা পুরসভা৷ প্রাথমিক পরিকল্পনা অনুসারে, কালীঘাট মন্দিরকে দৃষ্টিনন্দন করে তুলতে আশপাশের হকারদের অন্যত্র সরানো হবে৷ মন্দির সংলগ্ন দুধপুকুর, কুণ্ডপুকুর এবং চাতালকে একই চৌহদ্দির মধ্যে আনা হবে৷ মন্দিরের চারপাশে তৈরি হবে কংক্রিটের পাঁচিল৷ দেশ-বিদেশের পুণ্যার্থীরা যাতে মন্দিরে অবাধে প্রবেশ করতে পারেন, তার জন্য দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের আদলে এখানেও স্কাইওয়াক নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে৷ মমতার বহুদিনের ইচ্ছা, দক্ষিণেশ্বরের মতো কালীঘাট মন্দির চত্বরও আরও সুন্দর ও ঝকঝকে হোক৷ পুরসভাকে সেই কাজের দায়িত্ব সঁপেছেন তিনি৷ পুরসভা সূত্রের খবর, প্রথম পর্যায়ে মন্দির এবং তার আশপাশের এলাকাকে সুন্দর করে সাজানো হবে৷ মন্দির চত্বরকে পুরোপুরি হকারমুক্ত করা হবে, যাতে বাইরে থেকেই পুণ্যার্থীরা মন্দির দর্শন করতে পারেন৷ দ্বিতীয় পর্যায়ে মন্দিরের দিকে যাওয়ার রাস্তাগুলিকে আরও প্রশস্ত করা হবে৷ পুণ্যার্থীদের চলাচলের সুবিধার্থে দু’টি স্কাইওয়াক নির্মাণ করা হবে৷ তার মধ্যে একটি মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির দিকে গোপালনগর ব্রিজের মুখ থেকে শুরু হয়ে মন্দিরের সামনে গিয়ে শেষ হবে৷ আর একটি কালীঘাট ট্রাম ডিপোর সামনে থেকে শুরু হয়ে মন্দিরের প্রবেশদ্বার পর্যন্ত যাবে৷ কী ভাবে মন্দির চত্বরের সংস্কার হবে, তার রূপরেখা তৈরি করতে ইতিমধ্যেই তিনবার বৈঠকে বসেছেন পুর কর্তৃপক্ষ৷ মন্দির পরিচালন কমিটির প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে৷ হকার ও ডালা মালিকদের সঙ্গেও কথা বলছেন পুরকর্তারা৷ পুলিশকেও মাঠে নামানো হয়েছে৷ স্থানীয় তৃণমূল নেতারাও এ ব্যাপারে সক্রিয়৷ বিষয়টি তদারকি করছেন খোদ তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সি৷ কালীঘাট মন্দিরের সংস্কার নিয়ে মঙ্গলবার কলকাতা পুরভবনে এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় ছাড়াও পুরসভার ইঞ্জিনিয়ার, স্থানীয় কাউন্সিলর এবং মন্দির কমিটির কর্তারাও উপস্থিত ছিলেন৷ পুরসভার এক আধিকারিক জানান, মন্দিরের উন্নয়ন নিয়ে এ পর্যন্ত তিনটি বৈঠক হয়েছে৷ তা থেকে কোনও সমাধান সূত্র বেরিয়ে না আসায় আবার নতুন করে বৈঠক ডাকা হবে৷ তাতে হকার এবং ডালা মালিকদেরও ডাকার সিদ্ধান্ত হয়েছে৷ মেয়র জানিয়েছেন, মন্দিরের সংস্কার কী ভাবে হবে, তা নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি৷ পুরসভার দায়িত্বপ্রান্ত আধিকারিকরাও এ নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছেন৷
পুরসভা সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে মন্দির সংস্কারের জন্য মেয়র উদ্যোগী হলেও, তাতে প্রধান বাধা হকার এবং ডালা মালিকরা৷ মন্দির চত্বর এবং তার লাগোয়া অঞ্চলে ৮১টি ডালা রয়েছে৷ তাঁরা কয়েক যুগ এখানে ব্যবসা করছেন৷ মন্দির সংস্কারের ফলে তাঁদের জীবন-জীবিকা বিপন্ন হবে বলে আশঙ্কা করছেন ডালা মালিকরা৷ স্থানীয় ৮ নম্বর বরো কমিটির চেয়ারম্যান বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মন্দিরের পাশে অসংখ্য ডালা ও হকার রয়েছে৷ সংস্কারের সময় তাদের কথাও আমাদের ভাবতে হবে৷’’ তিনি বলেন, ‘‘দক্ষিণেশ্বরের সঙ্গে কালীঘাটের অনেক পার্থক্য৷ এখানে যে দু’টি রাস্তার উপর দিয়ে স্কাইওয়াক তৈরির কথা বলা হচ্ছে, সেগুলো খুবই সঙ্কীর্ণ৷ রাস্তার দু’পাশে অনেক দোকানদার, পুরোহিত, মিষ্টি-ফুল বিক্রেতা রয়েছেন৷ তাঁদের অস্বীকার করব কী ভাবে!’’ উদ্বিগ্ন মন্দির কমিটির সদস্যরাও৷ মন্দির কমিটির এক সদস্য জানান, ‘‘ডালা সরালে সেখান থেকে যে ঘরভাড়া আদায় হয়, তার ক্ষতিপূরণ কী ভাবে দেবে পুরসভা? পুরসভা কী ভাবে মন্দির সাজাবে, সে ব্যাপারে কমিটিকে কিছুই জানানো হচ্ছে না৷’’ মন্দির কমিটির সহ-সভাপতি বাবলু হালদার অবশ্য বলেন, ‘‘প্রশাসন যে পরিকল্পনা নিয়েছে , সেটা খুবই ভালো৷ ওরা আমাদের জানিয়েছে, হকারদের বিকল্প জায়গা দেওয়ার পরই সংস্কারের কাজ শুরু করবে৷’’ বেসরকারি উদ্যোগেও মন্দিরের গর্ভগৃহের সংস্কারের কাজ চলছে৷ তার জন্য বিদেশ থেকে মার্বেল পাথর আনা হয়েছে৷ বিগ্রহের পিছনে বসছে নতুন রুপোর চাঁদি৷