পাড়ায় পরিচয় ছিল রাজমিস্ত্রি হিসেবে। কাজের জন্য দেশের বিভিন্ন প্রান্তে তাকে ঘুরে বেড়াতে হয় বলে প্রতিবেশীদের জানিয়েছিল। কিন্তু সেই রাজমিস্ত্রি যে আসলে বড়মাপের জাল নোটের কারবারি, সিআইডির হাতে ধরা পড়ার পরই তা জানা গেল। যা দেখে রীতিমতো অবাক ইসমাইলেরর গ্রামের বাসিন্দারা। গত ৩১শে জানুয়ারী, বুধবার ভোররাতে তাকে মুর্শিদাবাদের রঘুনাথগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে সাড়ে তিন লক্ষ টাকার জাল নোট। সমস্ত নোটই ৫০০ ও ২০০০-এর বলে জানা গিয়েছে। নোটগুলি বাংলাদেশ থেকে আনা হয়েছিল বলে সিআইডির তদন্তকারী অফিসাররা নিশ্চিত।
মালদহে পুলিশ ধরপাকড় শুরু করায়, জাল নোটের কারবারিরা কৌশল বদলেছে বলে সিআইডি কর্তাদের কাছে খবর আসছিল। কিন্তু কোথায় তা রাখা হচ্ছে এবং কোন জেলাকে ব্যবহার করা হচ্ছে, তার খোঁজ করতে গিয়ে তাঁরা জানতে পারেন, মুর্শিদাবাদই এখন জাল নোট কারবারের বড় ঘাঁটি। মালদহের কারবারিরাই এখানে এসে ডেরা বেঁধেছে। বাংলাদেশ থেকে নিয়ে আসা জাল নোট মজুতও করা হচ্ছে এখানেই। সেই সূত্রেই তদন্তকারী অফিসারদের হাতে আসে ইসমাইলের নাম। তার সম্পর্কে খোঁজখবর করতে গিয়ে জানা যায়, সে জাল নোট পাচারের অন্যতম বড় মাথা। বাংলাদেশের জাল নোটের শীর্ষ কারবারিরা তাকে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দিয়েছে। তার মাধ্যমে জাল নোট পৌঁছোচ্ছে এ রাজ্য সহ দেশের অন্য প্রান্তেও। কিন্তু তাকে বেছে নেওয়ার কারণ কী? খুঁজতে গিয়ে তদন্তকারী অফিসাররা জানতে পারেন, ওই যুবকের বাংলাদেশে আত্মীয় রয়েছে। সেই সুবাদে তার বাংলাদেশে নিয়মিত যাতায়াত ছিল। সেখানকার বহু জায়গাই তার চেনা। সেদেশে থাকা তার এক আত্মীয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশের জাল নোট পাচারকারীরা ইসমাইলের সঙ্গে যোগাযোগ করে। তাদের প্রস্তাবে রাজি হওয়ার পরই তার মাধ্যমে জাল নোট পাঠানো শুরু হয় এদেশে।
তদন্তকারী অফিসাররা জেনেছেন, সে যে জাল নোটের কারবারি, তা যাতে গ্রামের কেউ জানতে না পারে, সেজন্য ইসমাইল রাজমিস্ত্রির কাজ নেয়। এই কাজ কিছুটা জানা ছিল তার। তাই ধৃত এই পেশাকেই বেছে নেয়। যাতে ভিন রাজ্যে কাজ করতে যাওয়ার নাম করে সেখানে জাল নোট ছড়িয়ে দিয়ে আসা যায়। ইসমাইল তদন্তকারী অফিসারদের জানিয়েছে, বাড়ি তৈরি করার নাম করে সে একাধিকবার বাংলাদেশে গিয়েছে। এরপর সেখানকার নোট পাচারকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের কাছ থেকে বড় অঙ্কের জাল নোট একাধিকবার এদেশে নিয়ে এসেছে। কখনও এজেন্টরাও সীমান্তে এসে নোট দিয়ে গিয়েছে তার হাতে। তার সঙ্গে সেদেশের নোট পাচারকারীদের কথা হত বলে জানা যাচ্ছে। ইসমাইলের দাবি, এই জাল নোট রাখার জন্য মুর্শিদাবাদে একটি স্ট্যাকইয়ার্ড তৈরি করে সে। অল্প কিছুদিনের মধ্যে সে বড় মাথা হয়ে যায়। তার কাছ থেকে এই নকল নোট এরাজ্যের অন্যান্য এজেন্টরা নিয়ে যেত। তবে ভিন রাজ্যে সে নিজেই নিয়ে যেত। তা থেকে অফিসাররা বুঝতে পারছেন, অন্যান্য রাজ্যের জাল নোট পাচারকারীদের সঙ্গে তার ভালো যোগাযোগ রয়েছে। বাংলাদেশের জাল নোট কারবারিদের কয়েকজনের নাম তার কাছ থেকে জেনেছেন সিআইডির গোয়েন্দারা। যাদের সম্পর্কে খোঁজখবর শুরু হয়েছে। তাদের মধ্যে কয়েকজন আবার বাংলাদেশ পুলিশের তাড়া খেয়ে এদেশে এসে তার কাছে থেকে গিয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। এমনকী তাদের নকল পাসপোর্ট পর্যন্ত ইসমাইল তৈরি করে দিয়েছে বলে খবর অফিসারদের কাছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন ঘটনায় অভিযুক্তরা এ দেশে পালিয়ে আসার পর, তার খুঁজে দেওয়া ডেরাতেই থেকেছে বলে জেনেছেন তদন্তকারী অফিসাররা। পরে তাদের পাসপোর্টের ব্যবস্থা করে দিয়েছে সে। তা থেকে আধিকারিকরা বুঝতে পারছেন, ভুয়ো পাসপোর্ট চক্রের সঙ্গেও তার যোগাযোগ রয়েছে। ধৃতকে এই বিষয়ে জেরা করে তথ্য জানার চেষ্টা হচ্ছে।