সিআইডির গাফিলতিতে হাইকোর্ট থেকে জামিন পেয়ে গেল জালনোট পাচারে অভিযুক্ত আসাদুল্লা বিশ্বাস৷ নিয়মমাফিক ১৮০ দিনের মধ্যে চার্জশিট পেশ করতে হলেও, ১৮১ দিনের মাথায় তা পেশ করেন সিআইডির তদন্তকারীরা৷ আসাদুল্লা আবার মালদহের কালিয়াচকে পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূল সদস্য ছিলেন, যদিও পরে তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়৷ এখন ইউএপিএ(বেআইনি কার্যকলাপ প্রতিরোধ আইন )-তে অভিযুক্ত জালনোট পাচারকারীদের পাণ্ডা জামিনে ছাড়া পেয়ে যাওয়ায় সিআইডিকে দুষছে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা এনআইএ৷ এনআইএ -এর এক কর্তার কথায়, ‘‘সিআইডি যদি একদিন আগে চার্জশিট দিত, তা হলে অভিযুক্ত জামিন পেত না৷ প্রভাবশালী হওয়ায় এখন সে সাক্ষীদের ভয় দেখাতে পারে৷ তাই বিচার প্রক্রিয়া বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা থাকছে৷’’ সিআইডির কেউ এ বিষয়ে মন্তব্য করতে চাননি৷ আজ সোমবার জেল থেকে ছাড়া পেতে পারে আসাদুল্লা৷
বর্তমানে এনআইএ-এর হাতে মামলাটি থাকায়, গত ২৫শে জানুয়ারী, বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্ট এনআইএ বিশেষ আদালতকে(নগর দায়রা আদালত) ২ লক্ষ টাকার দু’টি সিয়োরিটি বন্ডে আসাদুল্লাকে জামিন দেওয়ার নির্দেশ দেয়৷ তার আইনজীবী রাজদীপ মজুমদার বলেন, ‘‘ইউএপিএ অনুযায়ী, চার্জশিট দাখিলের আগে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমোদন নেওয়া সহ আরও যে সব আইনি দিক পালন করার কথা, সিআইডি সেগুলি যথাযথ ভাবে পালন করতে পারেনি৷ তার ভিত্তিতে আদালতে জামিনের আবেদন করা হয়৷ হাইকোর্ট তা মঞ্জুর করেছে৷’’ এনআইএ সূত্রের খবর, ২০১৬ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর কালিয়াচকের গোলমালের সময় আসাদুল্লার বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলা হয়, তাতে সে গ্রেপ্তারও হয়৷ ওই মামলায় হেফাজতে থাকাকালীনই তার বাড়ি থেকে ১ লক্ষ ৪৫ হাজার টাকার জাল নোট উদ্ধার হওয়ায় তার বিরুদ্ধে ২২ সেপ্টেম্বর জালনোট পাচারের অভিযোগে দ্বিতীয় মামলা রুজু করে মালদহ জেলা পুলিশ৷ পরবর্তীকালে তদন্তভার নেয় সিআইডি৷ আদালতের অনুমতির ভিত্তিতে তার বিরুদ্ধে বেআইনি কার্যকলাপ প্রতিরোধ আইনে মামলা রুজু করে সিআইডি৷ প্রথম মামলায় জামিন পেয়ে যায় আসাদুল্লা৷ কিন্তু দ্বিতীয় মামলার জন্য জেলে থাকতে হয় তাকে৷ ইউএপিএ ধারা অনুযায়ী ওই মামলায় ১৮০ দিনের মধ্যেই চার্জশিট পেশ করার কথা৷ কিন্তু সিআইডি তা পেশ করতে পারেনি৷ সিআইডি চার্জশিট পেশ করে ১৮১ দিনের মাথায়৷ নির্দিষ্ট সময়ে সিআইডি চার্জশিট দিতে না পারায় মালদহ আদালতের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে ২১ মার্চ জামিনের আবেদন করে আসাদুল্লা৷ কিন্তু ইউএপিএ মামলায় চার্জশিট পেশের আগে যে সরকারি অনুমোদন দরকার হয়, সেই অনুমোদন ছাড়াই আদালতে চার্জশিট দেয় সিআইডি৷ অনুমোদন না থাকায় চার্জশিট জমা নিলেও সেটিকে বিচার্য হিসাবে গ্রহণ করেননি বিচারক৷ তবে একইসঙ্গে তিনি আসাদুল্লার জামিনের আবেদনও খারিজ করে দেন৷
এই রায়ের বিরোধিতা করে হাইকোর্টে জামিনের আবেদন করেন বহিষ্কৃত ওই তৃণমূল নেতা৷ চার্জশিট পেশের পরপরই গত বছর এপ্রিলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের নির্দেশে আসাদুল্লার বিরুদ্ধে মামলা রুজু করে এনআইএ৷ তাকে হেফাজতেও নেয় এনআইএ৷ এনআইএ-এর এক তদন্তকারী বলেন, ‘‘জালনোট মামলায় তাকে জেরা করে বহু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিলেছিল৷ তদন্তে আরও অগ্রগতির জন্য তাকে হেফাজতে রাখা জরুরি ছিল৷ তাই হাইকোর্টে আমরা জামিনের বিরোধিতা করি৷ কিন্তু সিআইডির গাফিলতির জেরেই ইউএপিএতে অভিযুক্ত হওয়া সত্বেও জামিন পেয়ে যায় সে৷’’ যদিও আদালত শর্ত দিয়েছে, মালদহে যেতে পারবে না আসাদুল্লা৷ কোনও সাক্ষীকে ভয় দেখাতে বা প্রভাবিত করা যাবে না৷ সেই সঙ্গে মামলার বিচারের সময় তাকে হাজির থাকার নির্দেশও দিয়েছে আদালত৷