লস্কর-ই-তোইবা প্রধান হাফিজ সইদ, হিজবুল মুজাহিদিন প্রধান সইদ সালাউদ্দিন সহ ১২ জনের বিরুদ্ধে বিরাট চার্জশিট পেশ করল জাতীয় তদন্তকারী এজেন্সি বা এনআইএ। এদের সকলের বিরুদ্ধে জম্মু-কাশ্মীরে জঙ্গি কার্যকলাপে মদত দিয়ে দেশের বিরুদ্ধে ছায়াযুদ্ধ চালানোর অভিযোগে ১২ হাজার ৭৯৪ পাতার চার্জশিট প্রস্তুত করেছে এনআইএ।
গত ১৮ই জানুয়ারী, বৃহস্পতিবার নয়াদিল্লির আদালতে সংশ্লিষ্ট দলিল সহ চার্জশিট পেশ করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পরবর্তী পর্যায়ের তদন্ত চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি চেয়েছে জাতীয় তদন্তকারী এজেন্সি। এই বিষয়ে শুনানি আগামী ৩০ জানুয়ারী হবে বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত দায়রা বিচারক তরুণ শেরাওয়াত। পাকিস্তানের জঙ্গিনেতা হাফিজ সইদ, সালাউদ্দিন এবং অন্য ১০ জনের বিরুদ্ধে বিরাট এই চার্জশিট তৈরির জন্য প্রচুর কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। দেশের ৬০টি জায়গায় তল্লাশি চালানো হয়। সেখান থেকে ৯৫০টি সংশ্লিষ্ট তথ্য বাজেয়াপ্ত হয়েছে। একইসঙ্গে, ৩০০ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। দীর্ঘ তদন্ত প্রক্রিয়ার পর হাফিজ সইদ, সইদ সালাউদ্দিনের পাশাপাশি চার্জশিটে পাকিস্তানপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদী সইদ আলি শাহ গিলানি, বাসির আহমেদ ভাট, ব্যবসায়ী জাহুর আহমেদ শাহ ওয়াটলি এবং চিত্রসাংবাদিক কামরান ইউসুফের নাম উঠেছে। জম্মু-কাশ্মীরে অশান্তির সময় পাথর ছুঁড়তে দেখা গিয়েছিল চিত্র সাংবাদিক কামরান ইউসুফকে। চার্জশিটে নামোল্লেখ করা হয়েছে হুরিয়ত কনফারেন্স নেতা আফতাব আহমেদ শাহ, আলতাফ আহমেদ শাহ, নইম আহমেদ খান, ফারুক আহমেদ দার ওরফে বিট্টা ক্যারেটে, মহম্মদ আকবর খানডে, রাজা মেহরাজুদ্দিন কালওয়াল এবং বসির আহমেদ ভাটের। হুরিয়ত নেতাদের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের সঙ্গে হাত মিলিয়ে জম্মু-কাশ্মীরে সন্ত্রাসের আবহ তৈরির অভিযোগ করেছে এনআইএ। তদন্তকারী এজেন্সির দাবি, কাশ্মীরে কবে, কখন কীভাবে প্রতিবাদ হবে তার ক্যালেন্ডার তৈরি করেছিল হুরিয়ত নেতারা। সেই ক্যালেন্ডার স্থানীয় সংবাদপত্র, সোশ্যাল মিডিয়া এবং ধর্মীয় নেতাদের মাধ্যমে উপত্যকায় ছড়িয়ে দেওয়া হয়। এমআইএ’র মতে, এইসব কীর্তি করে জম্মু-কাশ্মীরে সন্ত্রাসের পরিবেশ তৈরি করতে চাইছিল হুরিয়ত প্রধানরা। আর উপত্যকায় দীর্ঘদিন ধরে সন্ত্রাসের পরিবেশ ধরে রাখার জন্য মদত এসেছে প্রতিবেশী রাষ্ট্র থেকে। তদন্তে দেখা গিয়েছে, ব্যবসায়ী জাহুর আহমেদ শাহ ওয়াটলির মতো ব্যক্তির সাহায্যে হাওলায় বিপুল পরিমাণ পাকিস্তানি মুদ্রা এদেশে এসেছে। কয়েকটি ভুয়ো কোম্পানি খুলে খুব সহজেই সেই টাকা ভারতে আনতে পেরেছে ওই ব্যবসায়ী। ২০১৬ সালে গুলির লড়াইয়ে হিজবুল মুজাহিদিনের পোস্টার বয় বুরহান ওয়ানির মৃত্যুর পর এনআইএয়ের হাতে ধরা পড়েছিল ব্যবসায়ী জাহুর আহমেদ শাহ। এছাড়া, এই মামলায় ইতিমধ্যেই এনআইএ গ্রেপ্তার করেছে আলতাফ আহমেদ শাহ ওরফে আলতাফ ফান্টুস, তার জামাই সইদ আলি শাহ গিলানি, মিরওয়াজ উমর ফারুক নেতৃত্বাধীন মধ্যপন্থী হুরিয়ত কনফারেন্সের মুখপাত্র আয়াজ আকবর, গিলানির নেতৃত্বাধীন হুরিয়ত কনফারেন্সের মুখপাত্র এবং বিচ্ছিন্নতাবাদী নইম খান, বাসির ভাট ওরফে পীর সফিুউল্লাহ এবং রাজা মেহরাজুদ্দিন কালওয়ালকে।