লোকসভায় পাশ হয়ে গেল বহুচর্চিত তিন তালাক বিল। বিবাহিত মুসলিম মহিলাদের অন্যায়ভাবে বিচ্ছেদ রুখতেই আজ এই বিল কেবল লোকসভায় পেশই হল না, একইসঙ্গে স্পিকারের বিশেষ অনুমতি আদায় করে তা পাশও করিয়ে নিল মোদি সরকার। প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টার উপর আলোচনা শেষে পাশ হল ‘দ্য মুসলিম উইমেন (প্রোটেকশন অব রাইটস অন ম্যারেজ) বিল, ২০১৭’। লোকসভায় পাশ হওয়ার পর বিলটি এখন যাবে রাজ্যসভায়। সংসদের উচ্চকক্ষ থেকে সবুজ সংকেত পেয়ে গেলে সেটি যাবে রাষ্ট্রপতির কাছে। তিনি সই করলে বিলটি আইনে পরিণত হবে। অর্থাৎ তখন থেকে কার্যকর হবে তিন তালাক আইন। বিলটি পেশ এবং পাশের সময় কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ বলেন, ‘‘মহিলাদের সমানাধিকার, সম্মান এবং ন্যায়ের লক্ষ্যেই এই বিল আনা হয়েছে। যার জেরে এখন থেকে কোনও পুরুষই অন্যায়ভাবে কোনও মুসলিম মহিলাকে তিন তালাক (তালাক-এ-বিদ্দাত) দিতে পারবেন না।’’ তিনি বলেন, এই বিলটিকে কখনও রাজনীতি, ভোট ব্যাঙ্ক, কিংবা ধর্মের মোড়কে দেখা উচিত হবে না। কারণ এটি দেশের মহিলাদের অধিকারের জন্য তৈরি।কী এই তিন তালাক বিল? এক, এর ফলে কোনও ব্যক্তি তাঁর স্ত্রী’কে উদ্দেশ্য করে ‘তালাক’ বললে তা বাতিল এবং বেআইনি হিসেবে গ্রাহ্য হবে। নির্দিষ্ট ব্যক্তি মুখে, অথবা লিখে, অথবা অন্য যে কোনও পদ্ধতিতেই ‘তালাক’ বলুন না কেন, তাকে মান্যতা দেওয়া হবে না। দুই, এক্ষেত্রে অভিযুক্ত ব্যক্তির তিন বছর পর্যন্ত জেল এবং জরিমানা হতে পারে। তিন, দোষী ব্যক্তি তাঁর স্ত্রী এবং নাবালক সন্তানদের ‘অস্তিত্ব ভাতা’ (জীবনধারণের জন্য প্রয়োজনীয় ভাতা বা সাবসিস্টেন্স অ্যালাওয়েন্স) দিতে বাধ্য থাকবেন। এবং এই ভাতার পরিমাণ সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেট নির্ধারণ করে দিতে পারেন। চার, তালাকপ্রাপ্ত মুসলিম মহিলাই তাঁর নাবালক সন্তানের দায়িত্ব নিতে পারবেন।
আজ তিন তালাক বিল পেশ হবে বলে সরকার আগে থেকে জানিয়ে দিলেও তা যে এদিনই আলোচনা শেষে পাশ করানোর পরিকল্পনা কেন্দ্র করেছে, বিরোধীদের তা জানায়নি মোদি সরকার। তাই বিলটি নিয়ে সেভাবে কারও প্রশ্ন না থাকলেও যে পদ্ধতিতে বিল পেশ এবং পাশ করা হল, তা নিয়ে প্রবল আপত্তি তোলে সিপিএম, কংগ্রেস, বিজেডি, আরজেডি, সপা, এনসিপি’র মতো দলগুলি। হায়দ্রাবাদের সংখ্যালঘু এমপি আসাদউদ্দিন ওয়েইসি সরকারের এই তাড়াহুড়োর বিল পেশের উদ্যোগের কড়া সমালোচনা করেন। সবমিলিয়ে উত্তাল হয় লোকসভা। ওয়াকআউট করে সিপিএম। যদিও এত কিছুর মধ্যেও তিন তালাক বিল নিয়ে নিশ্চুপ ছিল তৃণমূল। তারা আলোচনায় অংশও নেননি। ভোটাভুটিতেও ছিলেন না। অথচ এদিন রাতে টানটান উত্তেজনায় বিল পাশের সময় সভায় হাজির ছিলেন তৃণমূলের লোকসভার নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং এমপি ইদ্রিশ আলি।